স্ত্রী প্রজননতন্ত্র স্ত্রীদেহের যেসকল প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাদেরকে একত্রে স্ত্রী প্রজননতন্ত্র বলে।
প্রাথমিক ভাবে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক. স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের বাহিরের অংশ (Female external genital organs)
খ. স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ভিতরের অংশ (Female internal genital organs)
ক. স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের বাহিরের অংশ
বহি:প্রজনন অঙ্গসমূহ:
১) ভাল্ভা (Vulva)
২) কামাদ্রি (Mons pubis)
৩) বৃহৎ ভগোষ্ঠ (Labia majora)
৪) ক্ষুদৃ ভগোষ্ঠ (Labia minora)
৫) ভগাংকুর (Cliotoris)
৬) যোনিমুখ ও সতিচ্ছদ (Vaginal orifice and hymen)
৭) ভিসটিবিউল এবং বার্থোলিন গ্রন্থি (Vestibule and bartholin gland)
ভাল্ভা (Vulva)
মনস পিউবিস (Mons Pubis), ল্যাবিয়া মেজরা (Labia Mejora), ল্যাবিয়া মাইনরা (labia minora ), ক্লাইটোরিস(clitoris) ও ভেসটিবিউলের (vestibule) সমম্বয়ে ভালভা গঠিত ।
মনস পিউবিস
পিউবিস হাড্ডির সামনে,পশম বা লোম দ্বারা আবৃত যে পুরু ত্রিকোণ অংশটি আছে তাকে মনস পিউবিস বলে ।
ল্যাবিয়া মেজবা
সামনে মনস পিউবিস থেকে পিছনে পেরিনিয়াম (perineum) পযন্ত-ভালবাবে দুই পাশে যে দুটি যে দুটি চামড়ার ভাঁজ (fold) আছে তাকে ল্যাবিয়া বলে।
ল্যাবিয়া মাইনোরা
ল্যাবিয়া মেজবার ভিতরে দিকে চর্বি শূন্য পাতলা ঠোঁটের মতো আরও দুটি ভাঁজ আছে । এই ভাঁজ দুটিকে ল্যাবিয়া মাইনোরা বলে । ল্যাবিয়া মেজবার ভাঁজগুলো দুইভাগে ভাগ হয়ে ক্লাইটোরিসের সামনে ও পিছনে মিলিত হয়েছে । ল্যাবিয়া মাইনোরাতে কোন লোম থাকে না ।
ক্লাইটোরিস
ভালভাবে সম্মখভাবে এটি একটি ছোট লম্বাটে অতি সংবেদনশীল অংশ । ক্লাইটোরিসের একটি গ্লানস(glans),মুল অংশ (body) ও দুইটি ক্রুরা (crura) থাকে ।
ভেসটিবিউল এবং বার্থোলিন গ্ল্যাড (vestibule and bartholin gland)
সামনে ক্লাইটোরিস,পিছনে ফোরচেটি(forchette) ও দুইপাশে ল্যাবিয়া মাইনোরা দ্বারা পরিবেষ্টিত ত্রিকোণ অংশটি ভেসটিবিউল । ভেসটিবিউলে প্রধান ৪টি ছিদ্র আছে ।
১.মূত্রনালীর ছিদ্র
২.যোনিপথের ছিদ্র
৩.যোনিপথে পিছনের দিকে দুই পার্শ্বে দুইটি বার্থোলিন ডাক্টের (bartholin duct) ছিদ্র ।
খ. স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ভিতরের অংশ
১. যোনিপথ (vagina)
২. জরায়ু (uterus )
৩. ডিম্বনালী (fallopian tubes) এবং
৪. ডিম্বাশয় (ovaries)
যোনিপথ
এই পথটি জরাযুরে অভ্যন্তর ভাগ থেকে শুরু হয়ে ভালভায় শেষ হয়েছে । এই নালীটি মাংসপেশী, তন্ত ও পর্দা দিয়ে গঠিত এবং লম্বায় ৭-১০ সে.মি । যোনিপথের পিছনের দেয়ালটি সামনের দেয়ালের চেয়ে ১.৫-২ সে.মি বেশি লম্বা । যোনিপথের সামনেই আছে মূত্রথলী ও মূত্রনালী । যোনিপথের পিছনের দেয়াল বৃহদন্ত্রের নিম্নভাগ ও মলাশয়ের সাথে সন্নিহিত থাকে ।
জরায়ু
জরায়ু হচ্ছে পেলভিসের অভ্যন্তরে ফাঁকা ত্রিকোণাকৃতির একটি মাংসল অঙ্গ । এর সামনে থাকে মূত্রথলি ও পিছনে মলাশয় । জরায়ু লম্বায় ৭.৫ সে. মি.,৫ সে.মি. পুরু । জরায়ুর প্রধান কাজ মাসিক স্রাব এবং গর্ভধারণ ।
জরায়ুকে প্রধান ২টি ভাগে ভাগ করা হয়
ক. মূল অংশ বা বডি (body)
খ.জরায়ুর মুখ বা সারভিক্স (cervix)
ক. মূল অংশ
জরায়ুর মূল অংশটি সামনে পিছনে চ্যাপ্টা এবং একটি সরু অংশ (isthmus) দিয়ে জরায়ুর মুখের সাথে যুক্ত । মূল অংশের উপরের দুইকোণে থেকে দু’ডিম্ববাহীনালী শুরু হয়েছে । জরায়ু পেরিটোনিয়াম দ্বারা আবৃত । জরায়ুর দেয়াল তিনটি স্তরে বিভক্ত-
১. পেরিমেট্রিয়াম (perimetrium)
জরায়ুর বাইরের স্তরটি পেরিটোনিয়াম দ্বারা গঠিত । একে পেরিমেট্রিয়াম বলে ।
২. মায়োমেট্রিয়াম (myometrium)
জরায়ুর মধ্যবর্তী স্তরটি শক্তিশালী মাংসপেশী দ্বারা গঠিত ।গর্ভাবস্থায় এই স্তরটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হয় ।
৩. এন্ডোমেট্রিয়াম (endometrium)
জরায়ুর অভ্যন্তরভাগের স্তরটিকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলা হয় । গর্ভাবস্থার এই স্তরটির নাম হয় ডেসিডুয়া (decidua) । এখানে ভ্রুণ গ্রোথিত (implantion) হয় ।
জরায়ুর মুখ বা সারভিক্স
জরায়ু নলাকার, এই অংশটি ২.৫ সে.মি. লম্বা এবং ভিতরের দিকে জরায়ুর সাথে ভিতরের ছিদ্র দ্বারা সংযুক্ত । এটি বাইরে যোনিপথে উম্মুক্ত হয় । সারাভিক্স এর নিচের দিকের মুখ মাসিক স্রাব বের হওয়ার এবং শুক্রাণুর প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে ।
জরায়ুর ভারসন (version) এবং ফ্লেকশন (flexion)
জরায়ু তার অক্ষরেখা (axis) এর সঙ্গে একটু বাঁকাভাবে অবস্থান করে। অক্ষরেখার সাথে জরায়ুর শরীরের সামগ্রিক অবন্থানকে ভারসন বলা হয় । ভারসন ২ প্রকার-এন্টিভারসন এবং রেট্রোভারসন। যদি জরায়ুর মূত্রাশয়ের দিকে ঝুঁকে থাকে, তাহলে এ অবস্থানকে এন্টিভারসন বলে । যদি জরায়ুর পিছনে মলাশয়ের দিকে ঝুঁকে থাকে তাহলে একে রেট্রোভারসন বলে । স্বাভাবিক অবস্থায় বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই জরায়ু এন্টিভারটেড থাকে ।
জরায়ুর আর একটি অবস্থানের নাম ফ্লেকশন । এটি হচ্ছে সারভিক্স এর সাথে জরায়ুর বডি’র তুলনামূলক অবস্থান। ফ্লেকশন ২ প্রকার- এন্টিফ্লেকশন এবং রেট্রোফ্লেকশন ।
জরায়ুর বডি যদি সারভিক্সের সাথে মূত্রাশয়ের দিকে বাঁক সৃষ্টি করে বা ঝুঁকে থাকে,তাহলে তাকে এন্টিফ্লেকশন বলা হয় । অন্যদিকে জরায়ুর বডি যদি সারভিক্সের সাথে পিছনে মলাশয়ের দিকে বাঁক সৃষ্টি করে বা ঝুঁকে থাকে তখন একে রেট্রোফ্লেকশন বলা হয় ।
ডিম্বাবাহী নালী
জরায়ু থেকে লম্বা দুটি ডিম্বাবাহী নালী দুই দিকে ডিম্বাশয় পযন্ত বিস্তৃত । প্রতিটি ডিম্বাবাহী নালী চারটি অংশে বিভক্ত। জরায়ুর দিকে থেকে অংশগুলো যথাক্রমে- ইন্টারস্টিশিয়াল, ইস্থমাস, অ্যাম্পুলা ও ইনফান্ডিবুলাম । ইনফান্ডিবুলাম অংশ হাতের আঙ্গুলের মত বিভক্ত, একে ফিম্ব্রিয়া বলে । ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ও জরায়ুর গহ্বর থেকে শুক্রাণু এসে গ্রোথিত হয় ।
ডিম্বাশয়
ডিম্বাশয় তলপেটে জরায়ুর দুই পাশে ডিম্বাকৃতির দুটি গ্রন্থি । প্রতিটি ডিম্বাশয় লম্বা ৩ সে.মি. চওড়ায় ২ সে.মি. ও ১.সে.মি. পুরু ।
স্তন (breast)
সরাসরি প্রজননতন্তের অংশ না হলেও স্তন আনুষঙ্গিক প্রজনন অঙ্গ হিসাবে হয় । কারণ সন্তান প্রসবের পর এই গ্রন্থি দু’টি থেকেই বুকের দুধ উৎপন্ন হয় ।
স্তনের গঠন
স্তনের মাঝখানে প্রায় ২.৫ সে.মি ব্যাসার্ধের কালো অংশটির নাম অ্যারিওলা (areola) । এর মাঝে কালো চামড়া দ্বারা আবৃত ছোট মাংসপিন্ডটিকে নিপল বা স্তর বোঁটা বলে ।
দুটি স্তন বুকের দুইপাশে চর্বিস্তরের উপর বসোনো থাকে । প্রতিটি স্তন ১৫-২০ প্রকোষ্টে বিভক্ত এবং প্রকোষ্টের অভ্যন্তরে নালীগুলো অ্যালভিওলাইতে শেষ হয় । প্রত্যেক প্রকোষ্ঠ থেকে একটি দুগ্ধবাহী নালী দুধ নালী বহন করে
নিয়ে এসে বোঁটায় উম্মুক্ত হয় । অ্যালভিওলাই বা ক্ষুদ্রতম প্রকোষ্ঠের দুধ তৈরী হয় এবং অ্যারিওলার পিছনে সাইনাসে জমা থাকে । স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধ স্তন থেকে বের হয়ে আসে ।