ইনজেকশন কি
গর্ভনিরোধক ইনজেকশন মহিলাদের জন্য তিন মাস মেয়াদি অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। বাংলাদেশ জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন সমৃদ্ধ ডিএমপিএ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রচলিত আছে ।
ইনজেকশন কিভাবে কাজ করে
- জরায়ুর মুখে নিঃসৃত রসকে ঘন ও আঠালো করে যার ফলে শুক্রকীটকে জরায়ুতে প্রবেশে বাধা দেয়।
- ডিম্বস্ফুটনে বাধা দেয় ।
- জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামকে গর্ভসঞ্চারের জন্য উপযোগী হতে দেয় না। এন্ডোমেট্রিয়ামের গ্ল্যান্ড এর সংখ্যা এবং আকার কমার ফলে এটি পাতলা হয়ে যায় ।
ইনজেকশানের ডোজ বা মাত্রার পরিমাণ এবং প্রয়োগ বিধি
- প্রথম ডোজঃ ১৫০ মিলিগ্রাম ইনজেকশন গভীর মাংশপেশীতে দিতে হয়।
- পরবর্তী ডোজঃ প্রথম বার দেয়ার পর পরবর্তী ডোজসমূহ তিন মাস পর পর দিতে হবে।
ইনজেকশন গ্রহণের সুবিধা
- অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ।
- গোপনীয়তা রক্ষা করা নেয়া যায় ।
- একটি ইনজেকশন তিন মাস পর্যন্ত গর্ভসঞ্চারে বাধা দান করে ।
- অস্থায়ী পদ্ধতি, কাজেই পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় বা গর্ভধারণ করা যায় ।
- বুকের দুধের পরিমান ও গুনগত মানের উপর কোন প্রভাব ফেলে না । ফলে সন্তান জন্মদানের ৬ সপ্তাহ পরেই এটি ব্যবহার করা যায় ।
- জরায়ুর বাহিরে গর্ভসঞ্চারের ঝুঁকি কমায় ।
- অনেক সময় মাসিক বন্ধ করে দেয় বলে রক্তস্বল্পতা কমায় ।
- জরায়ুর ভিতরের দেয়ালে (এন্ডোমেট্রিয়াম) ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা দান করে ।
- জরায়ুতে টিউমার/সিস্ট প্রতিরোধে সহায়তা দান করে ।
- ইস্ট্রোজেন নেই বলে রক্ত জমাট বাধা বা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা দেখা যায় না।
ইনজেকশন গ্রহণের অসুবিধা
- মাসিক চক্রে অনিয়ম, যেমন- ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব বা অনিয়মিত রক্তস্রাব, দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত রক্তস্রাব, মাসিক বন্ধ থাকা। সাধারণত একটানা ১ বছর ব্যবহার করার পর কারো কারো মাসিক দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
- ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে ।
- ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার পর পুনরায় সন্তান ধারণ করতে সাধারণতঃ ৬-১২ মাস সময় লাগতে পারে।
- দীর্ঘদিন ব্যবহারে অস্থির ঘনত্ব কমে যেতে পারে ।
- ইনজেকশন নেয়ার জন্য ৩ মাস পরপর সেবাকেন্দ্রে যেতে হয় ।
- কোনো কোনো গ্রহিতার মাথা ধরে, মাথা ঝিমঝিম করে, স্তন ভারী এবং ব্যথা অনুভুত হয়, মানসিক অবসাদ, মেজাজ খিটখিটে হয়, স্বামী সহবাসের ইচ্ছা কমে যায় ।
- যৌন রোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে না।
ইনজেকশন দেয়ার উপযুক্ত সময়
- মাসিক শুরুর প্রথম ৫ দিনের মধ্যে ।
- গর্ভবতী নন এটা নিশ্চিত হলে মাসিকের যেকোনো সময়, যেমন-গত মাসিকের পর সহবাস না করে থাকলে, অন্য কোনো কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করা অবস্থায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে কোনো দিন থেকে শুরু করতে পারেন ।
- শিশুকে বুকের দুধ পান করালে প্রসবের ৬ সপ্তাহ পর থেকে শুরু করতে পারেন ।
- শিশুকে বুকের দুধ পান করালে প্রসবের পরপরই ।
- এমআর বা গর্ভপাতের ৭ সাথে সাথেই।
- আধুনিক অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়মিতভাবে ব্যবহার বন্ধ করার পরপরই ।
ইনজেকশনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
- ছোটখাট সমস্যা যেমন- ওজন বেড়ে যাওয়া, তলপেট ভারী ভারী লাগা, ব্যথা অনুভব করা, মাথা ধরা, মানসিক দুশ্চিন্তা ইত্যাদি হতে পারে ।
- কিছুদিন মাসিক বন্ধ থাকতে পারে (Amenorrhoea)।
- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তস্রাব হতে পারে বা ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে (Spotting or break-through bleeding)।
- অতিরিক্ত রক্তস্রাব হতে পারে (Menorrhoea)
- ইনজেকশনের স্থানে সংক্রমণ (Infection) হতে পারে
- চোখ এবং চামড়া অথবা যে কোনো একটি হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে (জন্ডিস হলে)
- ঘন ঘন প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়া এবং চোখে ঝাপসা দেখা
- পায়ের পেছনে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া এবং তা কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে
- ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার পরও গর্ভবতী না হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে
ইনজেকশন সেবা কোথায় পাওয়া যায়
আমাদের দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্বীকৃত এনজিও/ বেসরকারি ক্লিনিকে ইনজেকশন সেবা পাওয়া যায়। তাছাড়া পর্যাপ্ত সুবিধাদি থাকলে স্যাটেলাইট ক্লিনিকেও এই সেবা দেয়া সম্ভব ।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গর্ভনিরোধক ইনজেকশন
সরকারি পর্যায়ে শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন সমৃদ্ধ ডিএমপিএ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন ডিপো-প্রভেরা বিনামূল্য কমিউনিটি ক্লিনিক, এফডব্লিউসি, এফডব্লিউএ’তে পাওয়া যায় । এসএমসি ব্র্যান্ডের প্রজেস্টোরেন সমৃদ্ধ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন সোমাজেক্ট নামে ব্লু-ষ্টার, গ্রিন ষ্টার, এবং পিঙ্ক ষ্টার সেবাকেন্দ্রে পাওয়া যায় ।