জরুরি গর্ভনিরোধক পিল কি
জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার পিল বা ইসিপি হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি যা অরক্ষিত বা অনিরাপদ সহবাসের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করলে গর্ভে সন্তান আসার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধে মহিলারা ইসিপি ব্যবহার করতে পারেন। জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার পিল বা ইসিপি পরিবার পরিকল্পনার কোনো নিয়মিত পদ্ধতি নয়। এটি শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার পিল বা ইসিপি গর্ভধারণ রোধ করে, কখনও গর্ভপাত ঘটাতে সাহায্য করে না।
জরুরি গর্ভনিরোধক পিল কীভাবে কাজ করে
- ডিম্বস্ফুটনে বাধা দেয়।
- নিষিক্তক্রনে বাধা দেয়।
- জরায়ুর এন্ডমেট্রিয়ামের পরিবর্তন করে নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে গ্রথিত হতে দেয় না।
জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি কাদের জন্য
- কোনো নারী যদি ঝুঁকিপূর্ণ সহবাস করে কিন্তু গর্ভবতী হতে না চান, তবে তিনি সহবাসের ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এই খাবার বড়ি খেতে পারবেন ।
- সাধারণত গর্ভধারণে সক্ষম সব নারীরা ।
- যাদেরকে নিয়মিত খাবার বড়ি খেতে নিষেধ করা হয় তারাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
- সহবাসের সময় যারা পরিবার পরিকল্পনার কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেন না ।
- যদি কেউ পর পর ৩ দিন খাবার বড়ি খেতে ভুলে যান ।
জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি কখন ব্যবহার করা যায়
- অনিরাপদ সহবাসের পর যত তাড়াতাড়ি ইসিপি খাওয়া হবে ততবেশি এটি কার্যকর হবে । অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ১২০ ঘন্টার মধ্যে গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
- যদি সহবাসের সময় কনডম ফেটে যায় বা স্থানচ্যুত হয় তাহলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
- যদি ইনজেকশনের পরবর্তী ডোজ নিতে ২৮ দিনের বেশি দেরি হয়ে যায় তাহলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
- আইইউডি সম্পূর্ণ বা আংশিক বের হয়ে গেলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
- যদি আজল পদ্ধতি ব্যর্থ অর্থাৎ যোনির ভিতরে বীর্যপাত হয় তাহলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
- যদি নিরাপদকাল গণনায় ভুল হয় তাহলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
- যখন কোনো পদ্ধতি ছাড়া বা অনিচ্ছাকৃত বা জোরপূর্বক সহবাস হয় তাহলে ইসিপি ব্যবহার করতে হবে ।
জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি কীভাবে খেতে হবে
- বাজারে ১ ডোজ ও ২ ডোজের গর্ভনিরোধক বড়ি পাওয়া যায়। বড়ির সাথে দেয়া ব্যবহারবিধি অনুসরণ করতে হবে অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
- কিছু খাওয়ার পরপরই বা ঘুমের আগে এই গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়া ভালো ।
- অরক্ষিত সহবাসের ১২০ ঘণ্টার মধ্যে ১ম ডোজ এবং ১ম ডোজের ১২ ঘণ্টা পর ২য় ডোজ খেতে হবে। প্রথম বড়ি খাবার ২ ঘন্টার মধ্যে যদি কারো বমি হয়ে যায় তাহলে তখনই আরেকটি বড়ি খেতে হবে এবং ২য় ডোজ খাওয়ার আগে বমি প্রতিরোধক ওষুধ খেতে হবে ।
জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার পিলের সুবিধা
- জরুরি পদ্ধতি হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
জরুরি গর্ভনিরোধক পিলের অসুবিধা
- নিয়মিত পদ্ধতি হিসেবে এই খাবার বড়ি ব্যবহার করা যায় না। পদ্ধতিটি শুধুমাত্র জরুরিভাবে ব্যবহারের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইসিপির কার্যকারিতা দুটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় ।
- ইসিপি ব্যবহারে স্বল্প স্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবসন্নতা এবং স্তনে ব্যথা হতে পারে ।
- কারো কারো মাসিকের অসুবিধাও হতে পারে ।
জরুরি গর্ভনিরোধক পিলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে
- মাথা ব্যথা হতে পারে
- মাথা ঝিমঝিম করতে পারে
- অবসন্নতা বোধ হতে পারে
- স্তনে ব্যথা হতে পারে
- মাসিকের সমস্যা হতে পারে
- যোনিপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে
জরুরি গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহারে সতর্কতা
একই মাসে একাধিকবার জরুরি গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহারেও স্বাস্থ্যগত কোনো ক্ষতি নেই । তবে ব্যবহারকারীকে জানতে হবে যে -
- অতিরিক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (বিশেষ করে অনিয়মিত রক্তস্রাব মাথা ব্যথা) হয়ে থাকে।
- জরুরি গর্ভনিরোধক খাবার পিল বা ইসিপি পরিবার পরিকল্পনার কোনও নিয়মিত পদ্ধতি নয়। এটি শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
- নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তুলনায় এতে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই শুধু বেশি নয় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও বেশি।
সূত্রঃ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, আইইএমইউনিট, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ২০১৩;