পরিবার পরিকল্পনা কী এবং কেন
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রত্যেক বিষয়েই পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করা বাঞ্ছনীয়। পরিকল্পনা বিহীন কাজ উত্তম ফলদায়ক হতে পারে না। এমন কি পরিকল্পনা ব্যতীত কোনো গঠনমূলক কাজ সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এ বিশ্বজগত এক সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন-
“আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যকার কোনো কিছুই খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না”। (সূরা-৪৪, আয়াত-৩৮ -৩৯)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, এ বিশ্বজগত তিনি খেলাচ্ছলে কিংবা অপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করেন নি। সবকিছু সৃষ্টির পিছনে আল্লাহ তা’আলার একটি নিখুঁত পরিকল্পনা রয়েছে। অপর আয়াতে তিনি ঘোষণা করেন-
“আমি সব কিছু সুনির্দিষ্ট পরিমানে সৃষ্টি করেছি”। (সূরা -৫৪, আয়াত-৪৯)
মহান আল্লাহর সকল সৃষ্টির পিছনে সুষ্ঠ পরিকল্পনা রয়েছে বলেই তাঁর সৃষ্টিতে কোথাও কোনো অসামঞ্জসতা, বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম বা কোনোরূপ দোষক্রুটি লক্ষ্য করা যায় না। আল্লাহ তা’আলা আহকামুল হাকিমীন তাঁর কাজের জন্য কারো নিকট জবাবদিহি করতে হয় না। তা সত্বেও তিনি এ বিশ্বজগত নির্দিষ্ট পরিমাণে ও সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এ ঘোষণার মধ্যে মানব জাতির জন্য রয়েছে বিরাট শিক্ষা। আর তা হল মানব জাতির বাস্তব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে মহানবী (সা) বলেছেন“তোমরা আল্লাহর গুণে গুণাম্বিত হও”। তাই মানুষের উচিত সুপরিকল্পিত জীবন যাপন করা।
পরিবর গঠনের ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহ দান করেছেন এক বিশেষ পরিকল্পনা। ইসলামে পরিবার গঠনের প্রধান এবং একমাত্র পন্থা হচ্ছে বিয়ে। বিয়ে ব্যতীত পরিবারের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সেই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য পুরুষকে হতে হবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণ ছাড়াও সন্তানের লেখাপড়া, চরিত্র গঠন, ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া পিতার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জিত না হলে দৈহিক যোগ্যতা থাকা সত্বেও বিয়ে না করে অপেক্ষা করার নির্দেশ রয়েছে পুরুষের প্রতি। মহান আল্লাহ বলেন-“যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে”। (সূরা-২৪, আয়াত-৩৩) ।
প্রশ্নঃ পরিবার পরিকল্পনা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী জায়েয কী না?
উত্তরঃ পবিত্র কুরআন, হাদীস, বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম এবং মুতাকাদ্দিমীন ও মুতাআখখেরীন উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া অনুসারে জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি অবলম্বন তথা পরিকল্পিত পরিবার গঠন জায়েয।
আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেক্টর প্রখ্যাত ইমাম শেখ মাহমুদ শালতুত তার ‘আলফাতাওয়া’নামক বিখ্যাত গ্রন্থে বলেন---
“এর প্রেক্ষিতে আলেমগণের অভিমত হল, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতিতে সাময়িকভাবে গর্ভনিরোধক ব্যবহার জায়েয তো বটেই, আর্থ- সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে স্থায়ীভাবেও জায়েয”।
মালয়েশিয়ার জাওহার- এর মুফতি আলহাজ আব্দুল জলীল এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত ফাতওয়াটি প্রদান করেন।
“ স্থায়ী পদ্ধতি ছাড়া ঔষধ কিংবা গর্ভনিরোধক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে জন্মবিয়ন্ত্রণ করা জায়েয। যদি দু’জন অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহনের পরামর্শ দেন তাহলে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণও জায়েয”।
আল্লামা ইউসুফ আল-কারদাবী বতমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ মনীষীর গ্রহণযোগ্য একটি বিখ্যাত কিতাব “আল্ হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম” (পৃষ্ঠা: ২৬০-২৬৫) থেকে আলোচ্য প্রশ্নের উত্তর এখানে উদ্ধৃত করা হল—
যে অবস্থায় পরিবার পরিকল্পনা জায়েয---
বিশেষ প্রয়োজনে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ জায়েয হতে পারে। একটি প্রয়োজন হচ্ছে, মায়ের জীবন বা স্বাস্থ্যের ওপর যদি রোগ বা প্রসবকালীন সংকটের দরুণ হুমকি দেখা দেয়, তাহলে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এ সংকট বা হুমকির কথা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানা যাবে, কিংবা কোন বিশ্বস্ত-নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাবিদ তা বলে দেবে। আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন---
“ তোমরা নিজেদের হাতেই নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না (সুরা -২, আয়াত ১৯৫ )।
অন্যত্র তিনি বলেছেন—
“তোমরা নিজেরাই নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি অতীব দয়াবান (সুরা -৪, আয়াত -২৯) ।
দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে—বৈষয়িক অসুবিধা, সমস্যা ও অনিশ্চয়তা – অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা, যার দরুণ দীনি সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হবে। যার ফলে মানুষ সন্তানাদির কারণে হারাম জিনিস গ্রহণ ও অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার পরিণতি দেখা দেবে। আল্লাহ বলেছেন---
“ আল্লাহ্ তোমাদের সহজ স্বচ্ছলতা কামনা করেন এবং তিনি কষ্ট ও কাঠিন্য কামনা করেন না” (সুরা-২, আয়াত-১৮৫) ।
“ আল্লাহ্ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা বা অসুবিধা চাপিয়ে দিতে চান না” (সুরা -৫, আয়াত-৬)।
তৃতীয় হচ্ছে—সন্তানদের স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার কিংবা তাদের সঠিক লালন-পালনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা।
শরীআতের দৃষ্টিতে আরও একটি প্রয়োজনের উল্লেখ করা যায়। তা হচ্ছে, দৃগ্ধপোষ্য শিশু মায়ের আবার গর্ভসঞ্চার হলে শিশুর পক্ষে তা ক্ষতিকর হতে পারে। তখন মায়ের দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে।
নবী করীম (স.) উম্মতের জন্যে সামষ্টিকভাবে কল্যাণকর কার্যাদি করার হিদায়াত দিতেন। আর যে সব কাজের ফলে উম্মতের ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা করতেন, তা পরিহার করে চলতে বলতেন।
আধুনিক কালের গর্ভ্ বন্ধকরণে যেসব নব উপায় বা পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে তা প্রয়োগ ও ব্যবহার করে কল্যাণের দিকটার সংরক্ষণ সম্ভব। আর রাসূলে করীম (সা.) তা-ই চেয়েছিলেন। অর্থাৎ দুগ্ধপায়ী শিশুকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো। আর দুগ্ধ সেবনকালে স্ত্রী সঙ্গম নিষিদ্ধকরণে যে বিপর্যয় ঘটার আশংকা, তা থেকেও তিনি উম্মতকে রক্ষা করতে চেয়েছেন।
এ আলোচনার আলোকে ইবনে হাম্বলের মত ‘আযল’ জায়েয, তবে শর্ত হচ্ছে তা স্ত্রীর অনুমতিক্রমে হতে হবে। কেননা সঙ্গমস্বাদ ও তৃপ্তিলাভ এবং সন্তান ও উভয় দিকেই স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। হযরত উমর (রা.) স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিরেকে ‘আযল’ করতে নিষেধ করেছেন।
নবী করীম (সা.) নারীদের অধিকারের ওপর সে সময়ই এতটা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, যখন দুনিয়ার মানুষ নারীর অধিকার বলতে কোন বস্তুর সাথে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল।
এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, পরিবার পরিকল্পনা ইসলামী শরীআতে জায়েয। আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীস থেকে দেখা যায়----
“তোমরা তোমাদের সন্ত্রানদের গোপন পন্থায় ধ্বংস করবে না”।
কেননা দুগ্ধপায়ী শিশুর বর্তমানে স্ত্রী সঙ্গম করলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু নবী করীম (সা.) এ কাজকে (দুগ্ধপায়ী শিশুর বতমানে স্ত্রী সঙ্গম) হারাম ধরে নিয়ে নিষেধ করেননি। কেননা তার সময়ে অন্যান্য জাতির লোকেরা এই পন্হা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তাতে তাদের কোন ক্ষতি হচ্ছিল না। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর কালে তদ্দরুন স্ত্রী সঙ্গম যদি চূড়ান্তভাবে নিষেধ করে দেয়া হত তাহলে তাদের স্বামীদের তাতে কষ্ট হত। দুগ্ধ সেবনের মেয়াদকাল দুই বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এসব দিকে লক্ষ্য রেখে নবী করীম (সা.) বলেছেন---
“দুগ্ধপায়ী শিশুর মায়ের সাথে সঙ্গম করতে আমি নিষেধ করতে চেয়েছিলাম (মুসলিম, ইবনে মাযা, নাসাঈ, ইবনে হাম্বল ) ।
প্রশ্নঃ তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করোনা। কিন্তু বলা হচ্ছে দেশ দারিদ্র পীড়িত এবং সরকারের পক্ষে সকলের খাওয়া পরার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম চালান হচ্ছে।
উত্তরঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ বা পরিকল্পনা সন্তান হত্যা নয়। পরিকল্পিত উপায়ে পরিবার গঠন একটি বিশেষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পরিবারের আকার কেমন হবে তা সুনির্দিষ্ট বা অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়। কোন বিশেষ বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোন সময় পিতা-মাতা সন্তানের সংখ্যা সীমিত করতে আগ্রহী হবে আবার কখনও কখনও সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। সুতারাং পরিকল্পিত পরিবার মানেই সন্তান হত্যার মাধ্যমে সন্তান সীমিতকরণ নয়। অপরদিকে বীর্যকে তো সন্তান বলা হয় না। শিশু বা সন্তানের যত সংজ্ঞা আছে কোন সংজ্ঞাতেই কেউ শুক্রানু বা ডিম্বানুকে সন্তান বলেনি। বীর্য নষ্ট করাকে হত্যা বলা যায় না। হত্যার সংজ্ঞা হচ্ছেঃ
“যে কাজের দ্বারা মানব দেহ হতে প্রাণের সংযোগ ছিন্ন হয় তাকে কাতল বা হত্যা বলে। (বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য-১ /২৫৫, ইফাবা প্রকাশনা) ।
তাছাড়া কাওয়াইদুল ফিক্হ (পৃষ্ঠা-৪২৩) এ বর্ণিত আছে-
“হত্যা হচ্ছে দেহ থেকে আত্মার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া”।
বীর্যতে প্রাণের সংযোগ ঘটে না, তাই প্রাণের সংহারও হয় না। প্রাণের সংযোগ যদি না হয় , তাহলে প্রাণ হত্যা বলা যাবে কি? সুতরাং
“তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না”- এ কথার সাথে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে এক করে দেখা যথার্থ ও সংগত নয়। একটি পরিবারে, বিশেষত নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও বস্তিবাসীদের ঘরে কয়জন মানুষ থাকতে পারে স্বাভাবিকভাবে এটা বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণতো দূরদর্শিতার পরিচয়। পরিবারের কর্তারা যেমন এ চিন্তা করেন তেমনি রাষ্ট্র এবং সরকারকেও তা চিন্তা করতে হয। কারণ মৌলিক মানবিক ও নাগরিক অধিকার পূরণের জন্য মানুষ সরকারের কাছে দাবী জানায়।
আমাদের এই ছোট দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় এক হাজার লোক বাস করে। এটা স্বাভাবিক অবস্থা নয়। সুতরাং সরকারকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম নিতে হবে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেবল খাওয়াই মানুষের একমাত্র চাহিদা নয়; আরো অনেক মৌলিক চাহিদা আছে। সেসব বিবেচনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। কাজেই এটাকে নিয়ন্ত্রণ বা স্থিতিশীল রাখা জরুরী। এজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছেন। বহু বেসরকারি সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং আমজনতার মধ্যেও এ কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের আলেম সমাজও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
প্রশ্নঃ শরীআতে শুধু আযল পদ্ধতিকে ক্ষেত্র বিশেষে জায়েয বলা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিসমূহকে জায়েয বলা যাবে কি?
উত্তরঃ আযল হচ্ছে রাসূল্লাহ (সা) এর সময়কালের অনুমোদিত গর্ভ নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি। স্ত্রী-চর্চাকালে গর্ভাশয়ে বীর্যপাত না করে বাইরে ফেলার নামই আযল। আজকের বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার যুগে আযলের উন্নত রুপই হচ্ছে বর্তামন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। যেখানে নানাবিধ উপকরণের মাধ্যমে আযলের ন্যায় কার্যই সম্পাদন করা হয়। যেহেতু আযল অনুমোদিত সেহেতু আধুনিক পদ্ধতিও অনুমোদিত হওয়া স্বাভাবিক।
রাসূলে কারী (সা.) এর যুগে পাথর, গাছের ছাল, চামড়া, হাড় ইত্যাদিতে লেখা হত। বর্তমানে উন্নত কাগজ লেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেটাকে কেউ নাজায়েয মনে করে না। রাসূলুল্লাহ (সা) এর যুগে যাতায়াতের সাধারণ বাহন ছিল উট, গাধা, ঘোড়া। বর্তমানে আধুনিক দ্রুতগামী যানবাহন, বিমান ইত্যাদি এগুলোর স্থান গ্রহন করেছে। এক্ষেত্রে সবাই এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। সকল ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও উপকরণের ব্যবহারে আপত্তি নেই, তাহলে জন্মনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে আযলের উন্নত রূপ আধুনিক গর্ভনিরোধ পদ্ধতি গ্রহণে আপত্তি থাকবে কেন?
প্রশ্ন: পরিবার পরিকল্পনা কাযক্রমের মাধ্যমে দেশের যেনা বা ফিৎনাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না?
উত্তর : যেনা বা ব্যভিচার উৎসাহিত করা পরিবার পরিকল্পনা কাযক্রমের কোন কর্মসুচি নয় । তবে একথা বলা যায়, যেনা ব্যভিচার করার সময় কেউ জম্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করছে। এটা ব্যবহারকারীর ওপর র্নিভর করছে যে, সে কীভাবে ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অপারেশনসহ যেসব ক্ষেত্রে রোগীকে সেন্সলেস করতে হয় সে ক্ষেত্রে ড্রাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার একই জিনিস নেশার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। দুই ব্যবহার সমান নয় এবং উভয়ের হুকুমও সমান হতে পারে না। এমনিভাবে দেখুন,অপারেশনের ক্ষেত্রে ডাক্তার ছুরি-চাকু ব্যবহার করেন। আবার অনেক খুনী মানুষের প্রাণ হরণে ছুরি-চাকু ব্যবহার করে। উভয়ের ব্যবহার কি সমান? অনুরুপভাবে সমরাস্ত্র তৈরী হয়েছে দেশ রক্ষার প্রযোজনে। কেউ যদি এ অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে সেজন্য তাকেই দায়ী করা যাবে। তবে হ্যাঁ! এ ক্ষেত্রে সকল মহলের কাছে এ সুপারিশ করা যেতে পারে যে, উপকরণ ও জম্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুণলো যেন কেবল স্বামী-স্ত্রীর জন্যেই নির্ধারিত থাকে। অন্য কারো জন্য নয়। এটা নিশ্চত করতে পারলে হয়তো এর অপব্যবহার অনেকটা রোধ করা যেতে পারে এবং এক্ষেত্রে আমরা কিছু বিষয় বিবেচনা করতে পারি ।
১) পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ অবিবাহিতদের এসব উপকরণ বিতরণ করবে না। আইনগত তা অবৈধ ।
২) বিবাহিতরা সহজে এ উপকরণ পাওয়ার লক্ষ্যে এটি যে কোন ঔষধের দোকান এমনকি পানের দোকানেও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অনেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে অথবা কোন পরিচয় না দিয়েই এগুলো হস্তগত করতে পারেন। বিক্রেতাদের এমন নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে যে, “বিবাহিত প্রমাণ’’ সাপেক্ষে এসব উপকরণ বিক্রি করতে হবে ।
যেনা- ব্যভিচার, অশ্লীলতা ও পাপচার থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য চাই সুদুরপ্রসারী দাওয়াতী পরিকল্পনা; যা মানুষকে তাকওয়ার পথে নিয়ে যাবে। আর তাকওয়ারবান মানুষ পাপচার সহজলভ্য হলেও কখোনো সেদিকে পা বাড়াবে না । বলা বাহুল্য উল্লেখিত উপকরণাদী আবিস্কারের পৃর্বেও ব্যভিচারে কেউ কেউ লিপ্ত হয়েছে । তবে এর থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে তাকওয়ার খোদাভীতি ।
প্রশ্ন: পরিবার পরিকল্পনা কি কেবলমাত্র বাংলাদেশেই করা হয়? অ্ন্যান্য মুসলিম দেশের অবস্থা কী ?
উত্তর: না, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বহু মুসলিম দেশে এ ব্যাপারে অনেক অগ্রসর: বরং আমরাই অনেক পিছিয়ে পড়ছি নিম্নোক্ত পরিসংখ্যানটিতে এটা সুস্পষ্ট হবে।
পদ্ধতি ব্যবহারের হার ইরান ৭৩%, আলজেরিয়া ৭১%, তুরস্ক ৭৩%, বাহরাইন ৬২%, তিউনিশিয়া ৬৩%, ইন্দোনেশিয়া ৬২%, মিশর ৬০%, জর্দান ৫৯%, মালয়েশিয়া ৪৯%, মরক্কো ৬৭%, কুয়েত ৫২%, কাতার ৪৩.২, লিবিয়া ৪৫%, বাংলাদেশে ৬১.২% ইত্যাদি।
স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের দিক থেকেও অন্যান্য মুসলিম দেশ আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর। মোট পদ্ধতি ব্যবহারকারীর মধ্যে স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ইরানে ১৭.৫%, তিউনিশিয়া ৫.৬%, পাকিস্তানে ৬.৫%, মালয়েশিয়ায় ৬.৪%, বাংলাদেশে ৫.৮%, লিবিয়ায় ৪.৮%, ওমানে ৫.৪%, মরক্কোয় ৪.৩%, আরব আমিরাতে ৪.২%, তুরস্কে ৮.৪%, কাতারে ৪.১%, ইন্দোনেশিয়ায় ৩.২%, জর্দানে ২.৬%, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ “দুটি সন্তানের বেশী নয়- একটি হলে ভাল হয়” সরকার কেন এই শ্লোগান নিয়েছে?
উত্তরঃ সরকার হিসেব কষে দেখেছেন গড়ে দুটি সন্তান হলে জনসংখ্যা আর বাড়বে না। তার অর্থ এ নয় যে, সবাই দুটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে। স্বচ্ছল পরিবারেরর্ কেউ হয়তো দুটির অধিক সন্তানও নিতে পারে্ন। কারণ, বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আবার অস্বচ্ছল পরিবার একটির মধ্যে সীমিত রাখতে পারে। আমাদের পরিসংখ্যানগত তথ্য জানা না থাকার কারণে বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করতে বার্থ হই। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের সচেতন করার জন্য এই শ্লোগানটির অবতারণা করেছেন। তবে এটি ধর্মগ্রন্থের বাণী অথবা বিধিবদ্ধ আইন বলে কেও দাবী করেনি। তবে সচেতনতার বিকল্প নেই। বর্তমান জটিল সামাজিক পরিবেশে তাতে নানাবিধ কঠোরতা ও ক্লেশের কারণ হতে পারে। এর জন্য পরিবারের আয়তন ও সীমিত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ৫টি মানদন্ডকে সামনে রাখতে হবে।
১। পিতা-মাতার বিশেষ করে মায়ের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ।
২। পরিবার প্রতিপালনের অথনৈতিক সংগতি ।
৩। শিশুকে যথোপযুক্ত শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ খেলাধুলার ব্যবস্থা ইত্যাদি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সুযোগ দানের যোগ্যতা ।
৪। পরিবার প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের পর শিশুর মন-মানস ও বৃদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের জন্য সময়, যত্ন এবং সহর্চায দানের পর্যাপ্ত সময় প্রদান।
৫। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রদানের জন্য সমাজ এবং রাষ্ট্রের যোগ্যতা।
প্রশ্ন: পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী ও র্দীঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহনণর মাধ্যমে অঙ্গহানি করা হয় যা ইসলামে বৈধ নয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিতে আসলে কোন অঙ্গহানি করা হয়না। কেবলমাত্র স্থায়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে শুক্র বা ডিম্ববাহি নালীকে বেঁধে কেটে দেওয়া হয়; যা পরবর্তীতে প্রয়োজনে খুলে দেওয়া যায় এবং কাটা থাকলে ক্ষেত্র বিশেষ তা জোড়া লাগিয়ে দেয়া যায় ।
কারও যদি এপেন্ডিসাইটিস হয় তাহলে অন্ত্রনালীর শেষাংশে একটি বাড়তি অংশ “ এপেন্ডিক্স”কেটে ফেলা হয়। এতে কোন ক্ষতি হয়না। এই অপারেশনকে কেউ নাজায়েয বলেনি ।এছাড়া একজনের একটি কিডনি অন্যকে দান করা জায়েয রাখা হয়েছে, একটি চোখ অন্যকে দান করা সাদাকাহ হবে বলে আন্তর্জাতিক ফিকাহ একাডেমী ফাতওয়া প্রদান করেছে। কোন একটি দাঁত ব্যাথা করলে ডাক্তারের পরামর্শে তা উপড়ে ফেলা হয়। তাকেও কেউ অঙ্গহানি বলে না। প্রয়োজনের তাগিদে অল্প ক্ষতি মেনে নিয়ে বহুতর ক্ষতি থেকে আত্নরক্ষা ইসলামের নির্দেশনা। জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, টিউবেকটমি ও ভ্যাসেকটমির মাধ্যমে নারী ও পুরুষকে যে আপাত বন্ধ্যাকরণ করা হয় তার হার খুবই কম এবং তাও উপকারভোগী নারী ও পুরুষের সম্মতিতে তাদের বৃহত্তর স্বার্থে করা হয়। বর্তমানে যে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় তা বিশেষ প্রয়োজনে আবার পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। এ দিক থেকে এটি সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী পদ্ধতি বা অঙ্গহানি নয় । বিশেষর প্রয়োজনে অঙ্গের কার্যকারীতা বন্ধ রাখা এমনকি স্হানাস্থর ইসলাম শরীআয় বৈধ রয়েছে । মহান আল্লাহ্ বলেন -
“আল্লাহ্ তোমাদের উপর তোমাদের দ্বীনে কোন ক্ষতিকর বিষয় রাখেননি”। (সুরা- ২২, আয়াত-৭৮)।
অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন-
“তোমরা পরস্পরকে পূণ এ সংযমের কাজে সহযোগিতা করে গুনাহ ও সীমা লংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না” (সুরা-৫, আয়াত-২ ।
প্রশ্নঃ স্বামী ও স্ত্রীর সম্মিলিত জীবন-যাপনের মূখ্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান জন্মদান । জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই এই উদ্দেশ্যকে ব্যহত করা হচ্ছে না ?
উত্তরঃ দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য কেবল সন্তান জন্মদান এ ধারণাটি সঠিক নয় । পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন –
“মানুষের জন্য আল্লাহর একটি নির্দেশনা হলো যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে শাস্তিতে বসবাস করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন ভালবাসা এবং দয়া” । (সুরা-৩০, আয়াত-২১) ।
এ আয়াতে চারটি বিষয়কে বিবাহের উদ্দেশ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে-
১. স্থিরতার সাথে বসবাস
২. শান্তি
৩. ভালোবাসা
৪. সহমর্মিতা ।
আবার বিয়ে-শাদী ও দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ফিকহ গ্রন্থে এভাবে বলা হয়েছে –
১. নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত করা
২. পারস্পরিক ভালোবাসা ও প্রশান্তি অর্জন
৩. ইজ্জত আবরুর হেফাজত করা
৪. বংশ ধারা অব্যাহত রাখা ।
সুতরাং সন্তান না হলে বা কম থাকলেও দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ হয় । আর জম্মনিয়ন্ত্রণ অর্থ জম্ম বন্ধ করে দেয়া নয় । কাজেই তা বিয়ে-শাদীর উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে না ।
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্রস্বরুপ । অতত্রব, তোমারা তোমাদের ক্ষেতে যেমন ইচ্ছে গমন করা । এখানে চাষ করার অর্থ হচ্ছে সমানে বীজ বপন করা এবং জমিনেকে ফসলের উপযোগী করে তোলা । জম্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহনের ফলে এ চাষ এবং ফসল উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না ?
প্রশ্ন: জম্মনিয়ন্ত্রণ ও আযল এ দুয়ের মাঝে পাথক্য হচ্ছে, আযলে যেখানে শতকরা নব্বেই ভাগই গবসঞ্চারের সম্ভাবনা থাকে, সেখানে আধুনিক পদ্ধতিকে আযলের উন্নত সংস্করণ বলা যাবে কী ?
আযল হচ্ছে শরীআতসিদ্ধ জম্মনিরোধক ব্যবস্থা । বিষয়টি অনুমোদিত । এ সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস আছে যে, নবী করীম (সা.) বিষয়টি অবহিত ছিলেন এবং অনুমোদন করেছেন । ইমাম মুসলিম হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন-
“আমরা নবী করীম (সা.) এর সময় আযল করতাম । রাসূল (সা.) বিষয়টি জানতেন কিন্তু নিষেধ করেরনি । (মুসলিম শরীফ)
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আধুনিক প্রযুক্তি পূর্বের বিষয়গুলোকে সহজ, সচল ও গতি দান করছে । আগে হেঁটে বা ঘোড়ায় যেতে যেখানে এক মাস সফর করা লাগত, সেখানে আধুনিক যানবাহনে কয়েক ঘন্টায় যাওয়া যাচ্ছে । এজন্য কী আধুনিক যানবহন গ্রহণ করবেন না ? এমনিভাবে আযলের বিষয়টি সহজ, ভাবনাহীন এবং আরামদায়ক করার আধুনিক প্রযুক্তিও গ্রহন করা যায় । “স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে স্ত্রীর গর্ভে সন্তান উৎপাদক বীর্য প্রবিষ্ট না হয় । এ লক্ষ্যে পুরুষ যে কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে এবং স্ত্রীও কোন কিছু দ্বারা তার গভদ্বার রুদ্ধ করে রাখতে পারে” । ( বিস্তারিত দেখুন-যবতে বিলাদত আকলী আওর শরয়ী হাইসিয়ত সে ) । এক সময় মানুষ গাছের ছাল,হাড়-হাড্ডিতে লিখত; এরপর এলো কাগজ । এখন এসেছে কম্পিটারের মত আরও অত্যাধুনিক পদ্ধতি । এ সকল উপকরণ ও উপাদান লেখাপড়াকে সহজ করে দিয়েছে । আমরাও তা সাদরে গ্রহন করেছি । একইভাবে চিন্তা করলে গর্ভনিরোধের আধুনিক উপকরণ ব্যাভার করা যাবে না কেন? আযলের উদ্দেশ্য ছিল ১০০% গর্ভ নিরোধ । কিন্ত কার্যকর শতভাগ ছিল না । এখন তা প্রায় শতভাগ কাযকর করার চেষ্ট্ চলছে । এ তো একই উদ্দেশ্যের প্রতি ধাবিত হওয়া ।
প্রশ্নঃ শয়তান বলল, আমি আদম সন্তানদের আদেশ দিব, আর আল্লাহ্র গঠন প্রকৃতিতে পরিবতন সাধন করবে (সূরা- ৪,আয়াত ১১৯) । জম্মনিয়স্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করার ফলে আল্লাহ্র এর গঠন প্রকৃতিতে হস্তক্ষেপ করার শামিল নয় কি ?
সূরা আন- নিসার এ আয়াতটির পূর্ণ তরজমা এরূপ -
“আমি তাদেরকে (শয়তান মানুষকে) পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই। আমি তাদেরকে নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব আড় তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই । আল্লাহ্র পরিবর্তে কে্উ শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করলে সে সুম্পষ্টত্ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়”(ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কতৃক অনুদিত) ।
এ আয়াতটিতে শয়তান যে কান ছিদ্র করার কথা বলেছে তা হচ্ছে – আরবের মুশরিকরা বিশেষ ধরনের নর উটের বাচ্চার কান ছিদ্র করে দেব দেবীর নামে ছেড়ে দিত । এখানে শয়তান শিরকের দিকেই ইঙ্গিত করেছে । অন্যথায় বালিকারা যে কানের দুল, নাকফুল পরার জন্য কান ও নাক ছিদ্র করে তাও তো শিরক হয়ে যেত বা সৃষ্টির বিকৃতি হিসাবে গন্য হতো । যেসব শিশুর মলদ্বার থাকে না, অপারেশন করে তার দরজা খুলে দেওয়া কি সৃষ্টির বিকৃতি ? অপারেশন করে হার্টের কৃতিম ভাল্ব লাগানো কি সৃষ্টির বিকৃতি ? গরু ছাগলকে খাসি করা কি সৃষ্টির বিকৃতি নয় ?
জম্মনিয়েন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহন কিছুতেই আল্লাহ্র এই গঠন –প্রকৃতিতে হস্তক্ষেপ করার শামিল নয় । কেননা, এতে প্রচলিত ৭টি পদ্ধতি একটিতেও অঙ্গহানি করতে হয় না । এছাড়া আমরা নিজেদের বহু প্রযোজনে আল্লাহ্র গঠন প্রকৃতিতে হস্থক্ষেপ করি । যা আবার শরীআত আমাদেরকে অনুমোদন দিয়ে থাকে । জম্মগত কাটা ঠোঁট বা নাককে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে সুন্দর আকৃতি দিয়ে থাকি ; হার্টের ভাল্ব, কিডনি ইত্যাদি পরিবতন করি; চুল প্লান্ট করি । কখনো বা প্রয়োজনে হাত পা কেটে বাদ দিয়ে ফেলি । তাহলে এগুলো কি আল্লারহ্ প্রকৃতিতে পরিবর্তন করার শামিল?