খাবার বড়ি (পিল)
গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি/পিল নিরাপদ ও কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি । বাংলাদেশে খাবার বড়ি সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি । বর্তমানে প্রচলিত মিশ্র খাবার বড়ির উপাদান হোল ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টোরেন হরমোন । মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খাবার বড়ির প্রকার নির্ণয় করা হয় । এছাড়া শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন সমৃদ্ধ মিনিপিলও কার্যকর গর্ভনিরোধক বড়ি হিসাবে ব্যবহৃত ।
গর্ভধারণ প্রতিরোধে খাবার বড়ি কিভাবে কাজ করে
- সারভিক্সের শ্লেষাকে ঘন করে শুক্রকীটকে জরায়ুতে প্রবেশে বাধা দেয় ।
- ডিম্বস্ফুটনে বাধা দেয় । স্বাভাবিক মাসিক চক্রের মাঝামাঝি সময়ে লিউটিনাইজিং হরমোন হঠাৎ বেড়ে যাবার ফলে ডিম্বস্ফুটন হয় । খাবার বড়ি লিউটিনাইজিং হরমোন হঠাৎ বেড়ে যাওয়াকে প্রতিহত করে ডিম্বস্ফুটন হতে দেয় না ।
- ডিম্ববাহী নালীর স্বাভাবিক নড়াচড়ার গতি কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রকীটের গতিও কমে যায় ।
- জরায়ুর ভিতরের ঝিল্লির বেড়ে যাওয়া রোধ করে, ফলে নিষিক্ত ডিম্ব জরায়ুতে গ্রথিত হবার মত কোনো পরিবেশ না পেয়ে গ্রথিত হতে পারে না ।
মিশ্র খাবার বড়ি প্রথম শুরু করার নিয়ম
বাংলাদেশে প্রায় সকল মিশ্র খাবার বড়ির প্যাকেটে ২১টি সাদা জন্মনিরোধক বড়ি এবং ৭ টি খয়েরি বড়ি (আয়রন বড়ি) থাকে । যেসব প্যাকেটে ২১টি বা ২২টি বড়ি থাকে সেক্ষেত্রে সব শেষ হয়ে গেলে মাসিকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে । মাসিক শুরু হলে মাসিকের প্রথম দিন থেকে আবার নতুন প্যাকেটের বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে । যদি মাসিক না হয় এবং গ্রহীতা নিশ্চিত থাকেন যে, কোনো বড়ি খেতে ভুল হয় নি তবে শেষ বড়ি খাওয়ার ৭ দিন পরে নতুন পাতা থেকে বড়ি খেতে শুরু করবেন । এছাড়া-
- ডিম্বস্ফুটন সঠিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করা উচিত ।
- মহিলা যদি নিশ্চিত হন যে, তিনি গর্ভবতী নন তবে প্রয়োজনে যে কোনো দিন থেকে শুরু করতে পারেন ।
শুধুমাত্র প্রোজেস্টেরন যুক্ত খাবার বড়ি
শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন দিয়ে যে জন্মবিরতিকরন খাবার বড়ি বা পিল তৈরি হয় তাই মিনিপিল । মিনিপিল শতকরা ৯৭- ৯৮ ভাগ কার্যকর । মিনিপিল খাওয়ার নিয়ম
মিনিপিল প্রথম শুরু করার সময়
- প্রতিদিন একই সময়ে একটি করে বড়ি খেতে হবে ।
- সন্তান প্রসবের পরপরই (৪৮ ঘন্টার মধ্যে) বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে এবং ৬'মাস চালিয়ে যেতে হবে ।
- প্রতিদিন একই সময়ে ভরা পেটে একটি করে বড়ি খেতে হবে।
- বড়ি খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থেকে ৩ ঘন্টার বেশি বিলম্ব করা যাবে না।
- একটি প্যাকেটের সবগুলো বড়ি খাওয়া হয়ে গেলে পরদিনই নতুন আরেকটি পাতা থেকে শুরু করতে হবে । দুই প্যাকেটের মাঝে বিরতি দেয়া যাবে না।
শুধুমাত্র প্রজেস্টিনসমৃদ্ধ জন্মবিরতিকরণ খাবার বড়ি খেতে ভুলে গেলে করণীয়
- বড়ি খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে মনে পড়ার সাথে সাথে ভুলে যাওয়া বড়িটি খেতে হবে এবং পরবর্তী বড়িগুলো নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে।
- বড়ি খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বের ক্ষেত্রে মনে পড়ার সাথে সাথে তুলে যাওয়া বড়িটি খেতে হবে এবং এ দিনের বড়িটি যথাসময়ে খেতে হবে। সহবাসের ক্ষেত্রে পরবর্তী দুইদিন কনডম ব্যবহার করতে হবে অথবা সহবাস থেকে বিরত থাকতে হরে। শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়ের মাসিক শুরু না হলে দুইদিন কনডম ব্যবহার করা লাগবে না।
মিশ্র খাবার বড়ি থেতে কুলে গেলে করণীয়
- যদি একদিন বা দুই দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহলে যখনই মনে পড়বে তখনই একটি বড়ি খাবেন এবং ঐদিনের বড়িটিসহ পাতার অন্য বড়িগুলো যথা সময়ে খাবেন
- যদি মাসিকের প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে পর পর ৩ দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তবে মনে পড়ার সাথে সাথে একটা বড়ি খাবেন এবং ঐদিনের বড়ি নির্দিষ্ট সময় খাবেন । বড়ির পাতার বাকি বড়িগুলো নিয়মিত শেষ করবেন। পরবর্তী সাতদিন তার স্বামী কনডম ব্যবহার করবেন অথবা স্বামীর সাথে সহবাস থেকে বিরত থাকবেন। প্রয়োজনে ইসিপি ব্যবহার করবেন, যদি ৫ দিনের মধ্যে সহবাস করেন।
- যদি মাসিকের তৃতীয় সপ্তাহে পর পর ৩ দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তবে মনে পড়ার সাথে সাথে একটা বড়ি খাবেন এবং ঐদিনের বড়ি নির্দিষ্ট সময় খাবেন। বড়ির পাতার সাদা বড়িগুলো নিয়মিত শেষ করবেন। পরের দিন থেকে নতুন পাতার বড়ি শুরু করবেন। পরবর্তী সাতদিন তার স্বামী কনডম ব্যবহার করবেন অথবা স্বামীর সাথে সহবাস থেকে বিরত থাকবেন। প্রয়োজনে ইসিপি ব্যবহার করবেন যদি ৫ দিনের মধ্যে সহবাস করেন।
খাবার বড়ির সুবিধা
- সঠিক ভাবে খেলে এটি অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ ।
- প্রজননক্ষম সকল বয়সী মহিলা / নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে খাবার বড়ি ব্যবহার করতে পারেন ।
- এটি একটি অস্থায়ী পদ্ধতি, যে কোনো সময় বড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় বা গর্ভধারণ করা যায় ।
খাবার বড়ির অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধা
- জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণের ঝুকি কমায় ।
- মাসিকের সময় জরায়ুর মোচড়ানো ব্যথা কমায় ।
- মাসিকের স্রাবের সময়কাল ও পরিমাণ কমায় এবং রক্তসল্পতা দূর করতে সাহায্য করে ।
- মাসিক চক্রকে নিয়মিত করে ।
- ডিম্বাশয়ে সিস্ট হওয়ার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ।
- স্তনের ব্যাধির সম্ভাবনা কমায় ।
- মাসিক পূর্ববর্তী উপসর্গ কমায় ।
খাবার বড়ি গ্রহণের অসুবিধা
- প্রতিদিন খেতে হয় ।
- যৌন রোগ প্রতিরোধ করে না ।
- মাসিক স্রাব বন্ধ থাকতে পারে।
- যোনিপথের পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে ।
- ইস্ট্রোজেন যুক্ত খাবার বড়ি খেলে বুকের দুধ কমে যেতে পারে ।
- বিমর্ষতা দেখা দিতে পারে ।
খাবার বড়ির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
খাবার বড়ি ব্যবহারের প্রথম দিকে (৩ থেকে ৪ মাস) ছোটখাটো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । যেমন-
- উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে
- স্তন ভারী বোধ হওয়া এবং স্তন স্পর্শ কালে ব্যথার অনুভুতি
- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব
- বিমর্ষতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব
- মাথা ধরা
- মুখে ব্রন
- ওজন বৃদ্ধি
- যে সমস্ত মহিলা মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন, স্ট্রোক ইত্যাদি-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।
খাবার বড়ি কোথায় পাওয়া যায়
আমাদের দেশে সরকারি পর্যায় মাঠকর্মী, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং স্বীকৃত এনজিও/ বেসরকারি ক্লিনিক, ফার্মেসিতে খাবার বড়ি পাওয়া যায় ।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্মবিরতিকরণ খাবার বড়ি
সরকারি পিল সুখী বিনামুল্য মাঠকর্মীর কাছ থেকে, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পাওয়া যায় । এসমসি ব্র্যান্ডের পিল নরেট-২৮, ফেমিকন, ফেমিপিল, মাইপিল, ওভাকন গোল্ড, এবং শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন সমৃদ্ধ মিনিপিল মিনিকন নামে যে কোনো ফার্মেসিতে পাওয়া যায় ।