একটি শিশু জন্ম নেয়ার সাথে সাথে একটি নতুন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী করে তোলার জন্য বেশ কিছু যত্নের প্রয়োজন হয়। জন্মের থেকে ২৮ দিন পর্যন্তকে নবজাতক বলা হয়।
একটি নবজাতককে তখনই সুস্থ বা স্বাস্থ্যবান শিশু বলা যায়, যখন সে -
অপরিণত শিশু:
যখন কোনো শিশু গর্ভের ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে অপরিণত শিশু বলে। অপরিণত শিশুর বৈশিষ্ট্যঃ
সূত্রঃ প্রজনন স্বাস্থ্য সহায়িকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউ এন এফ পি এ, ২০০২
প্রথম ৪৮ ঘন্টা / প্রথম সপ্তাহের যত্ন
জন্মের পরপরই নবজাতককে প্রয়োজনীয় যত্ন করতে হবে। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে হলে –
নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে হলে
জন্মের ২৮ দিন পর্যন্ত নবজাতকের বিপদচিহ্ন সমূহ
এক্ষেত্রে যা করতে হবে
শ্বাসকষ্ট
জন্মের সময় স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে এমন শিশুরও পরে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। সংক্রমণ, হৃৎপিণ্ড অথবা ফুসফুসের রোগ, শরীরের উচ্চ অথবা নিম্ন তাপমাত্রা অথবা অন্যান্য অসুস্থতার জন্যও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
শ্বাসকষ্টের লক্ষণঃ
বুকের দুধ টানতে না পারা
মা যদি বলেন শিশু জন্মের পর ঠিকমত খেতো কিন্তু বর্তমানে আগের মত খাচ্ছে না বা বুকের দুধ টানতে পারছে না ও নেতিয়ে পড়ছে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুর মারাত্মক রোগ আছে। এ অবস্থায় শিশুর মায়ের দুধ খাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে ও শিশুকে সেবাদান কেন্দ্রে রেফার করতে হবে ।
জ্বর বা শরীর ঠান্ডা হওয়া
জ্বর (৩৭.৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর বেশি তাপমাত্রা) -
নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর উপরে উঠে গেলে জ্বর বা উচ্চ তাপমাত্রা বলা হয় । উচ্চ তাপমাত্রার কারণে পানি ঘাটতি অথবা শরীরের পানি কমে যায়, খিঁচুনি হতে পারে, শরীর অসাড় হয়ে যেতে পারে, সংজ্ঞাহীন এমনকি মৃত্যুও হতে পারে । অতি সত্বর নবজাতককে রেফার করতে হবে ।
নিম্ন তাপমাত্রা (৩৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর কম তাপমাত্রা) -
শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর নিচে নেমে গেলে সেই তাপমাত্রা হল নিম্ন তাপমাত্রা (হাইপোথার্মিয়া) । তাপমাত্রা রক্ষার ব্যবস্থা না নিলে জন্মের পরপরই নবজাতকের নিম্ন তাপমাত্রা হতে (হাইপোথার্মিয়া) পারে । ঘরের তাপমাত্রা কম, নবজাতকের শরীর ভেজা, নবজাতককে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে না রাখলে, অপরিণত ও কম-জন্ম-ওজনের নবজাতকের ক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রা হতে পারে । প্রসবের ঘরের তাপমাত্রা যাতে ঠান্ডা না থাকে, সেজন্য জন্মের পরপর শিশুকে শুষ্ক ও উষ্ণ রেখে, মায়ের বুকের সাথে লাগিয়ে (Skin to skin contact) বা ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (KMC) পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং রেফার করার প্রয়োজন হলে যাবার পথে মাঝখানে কাপড় না রেখে মা অথবা অন্যকারো বুকের সাথে শিশুকে লাগিয়ে রেখে নিম্ন তাপমাত্রা রোধ করতে হবে ।
শিশুর নিম্ন তাপমাত্রা যদি দ্রুত সনাক্ত করা না যায় এবং চিকিৎসা করা না হয়, তবে শিশুর অবস্থার অবনতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে ।
হাইপোথার্মিয়া প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা -
খিঁচুনি
বিভিন্ন অসুস্থতায় অনেক সময় শিশুর হাত-পা শক্ত হয়ে যায়, তাকে খিঁচুনি বলে। খিঁচুনির সময় শিশু অজ্ঞান হয়ে যায় এবং সে সময় ডাকলে অথবা নাড়া দিলে সে কোনো সাড়া দেয় না। বিভিন্ন কারণে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে । অতিরক্ত জ্বরের সময় প্রায়ই শিশুদের খিঁচুনি হয়। তাই জ্বরের সাথে খিঁচুনি হলে বা অন্য যে কোন কারণে খিঁচুনি হলেই তা বিপদজনক চিহ্ন মনে করে দ্রুত সেবাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে ।
নাভিপাকাঃ
নাভির সংক্রমণের চিকিৎসায় বিলম্ব হলে অথবা সঠিক চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। নাভিতে কোনো কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই ।
নাভির সংক্রমণের লক্ষণ-
নাভির যত্ন-
জন্ডিস
অধিকাংশ নবজাতক বিশেষ করে অপরিণত শিশুদের যকৃত অপরিণত থাকে বলে পিত্তরসে যথেষ্ট বিলিরুবিন নিঃসরণ করতে পারে না। ফলে বিলিরুবিন রক্তে চলে আসে এবং শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। এই জন্ডিসকে শরীরবৃত্তীয় জন্ডিস বলে। জন্মের ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বিশেষ করে মাথা ও মুখ হলুদ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শিশুর সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের রং স্বাভাবিক হয়ে আসে। জন্ডিস যেন মারাত্বক আকার ধারণ না করে সেজন্য -
সূত্রঃ প্রজনন স্বাস্থ্য সহায়িকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউ এন এফ পি এ, ২০০২
সমস্যা চিহ্নিতকরণ
বেশিরভাগ শিশুই সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করে । জন্মের পর শিশুকে খুব দ্রুত সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয় । সেজন্য শিশু জন্মের প্রথম কয়েক ঘন্টার যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পরিবারের লোকজন নবজাতকের বিপদজনক চিহ্নগুলো সম্পর্কে জানে না, তাই এসম্পর্কে তারা সময়মত সচেতন হয় না ও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে না । সেবাদানকারীদের জন্য কিছু সম্ভাব্য সমস্যা ও সমস্যার সমাধান নিম্নে দেয়া হলোঃ
সমস্যাগুলো
উপরের সমস্যাগুলোর কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধান
নবজাতকের জন্য জন্মের পরপরই মায়ের দুধ
শালদুধ কী?
নবজাতকের জন্য জন্মের পরপরই মায়ের দুধই একমাত্র খাবার। শিশু জন্মের পরপরই মায়ের শরীরে প্রথম ঘন আঠালো হলুদ বর্ণের যে দুধ বের হয় তাকে শালদুধ বলে ।
শালদুধের উপকারিতা
শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা
শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো বলতে বুঝায় শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস কেবলমাত্র বুকের দুধই খাওয়ানো। এসময় একফোঁটা পানিরও প্রয়োজন নেই ।
শিশুর জন্য
মায়ের জন্য
মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি
সংযোজনের আগে স্তনের বোঁটা উপরের ঠোঁটে বারে বারে লাগাতে হবে। শিশু বড় হাঁ করলে তাকে স্তনে লাগাতে হবে এবং নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবেঃ