বিয়ে

দেশের বর্তমান বিবাহ আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স কমপক্ষে ১৮ ও ছেলেদের বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও অধিকাংশ মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়।
অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এ বয়সে ছেলে বা মেয়েদের বাবা কিংবা মা হবার মতো মানসিক ও শারীরিক পূর্ণতা আসে না। এ ছাড়াও অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার ফলে মা হতে গিয়ে মেয়েরা বিভিন্ন জটিল অবস্থার মুখোমখি হয়। অল্প বয়সে বিয়ে না করে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে জীবনটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেয়া যায়।
আমাদের সমাজে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদেরকে নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। উপযুক্ত পাত্র পেলেই বিয়ে দিয়ে দেন। তারা মনে করেন মেয়েদের বিয়ে দিলে সন্ত্রাসী বা বখাটে ছেলেদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবার কখনো ভালো পাত্র পেলেও বাবা-মায়েরা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। মনে করেন এতো ভালো পাত্র পরে না-ও পেতে পারেন। কখনো কখনো সামাজিক চাপে পড়ে বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেন। দারিদ্র্যের কারণেও অনেক বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন। কখনো কখনো বরপক্ষ কম বয়সের মেয়েকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করে। অন্যদিকে কিছু কিছু মেয়েপক্ষ মনে করে যে, মেয়েদের বয়স বেশি হলে, বিয়ের জন্য ভালো পাত্র পাওয়া যায় না। কারণ যা-ই হোক না কেন, অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মেয়েদের ১৮ বছরের আগে এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে দেয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই নয়, কেউ ১২ বছরের কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করলে, সে নারী ও শিশু নির্যাতন বা শ্লীলতাহানি আইনের আওতায় পড়বে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি পাবে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানাসহ সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। আর ১২ বছরের বেশি বয়সি ও ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করলে ২ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় একটি ছেলেকেই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয় এবং বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্বও স্বামীকে নিতে হয়। এসব কারণে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেদের বিয়ে করতে দেরি হয়।
বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন, যার ওপর একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করে। তাই প্রত্যেক বাবা-মা তার ছেলে বা মেয়েকে দেখে-শুনে বিয়ে দিতে চান, যেন তারা মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে নতুন পরিবারের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে সুখে থাকতে পারে।
অপরদিকে বাবা-মায়েরও উচিত যার বিয়ে সে তাদের পছন্দের পাত্র-পাত্রীটিকে পছন্দ করছে কিনা তা জেনে নেয়া। এক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দটি ছেলেমেয়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া বাবা-মায়ের উচিত নয়। কৈশোরে জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কম থাকে। এ সময় আবেগের মোহে নিজে নিজে পাত্র-পাত্রী বাছাই করলে ভুলও হতে পারে। এতে নিজেদের জীবন যেমন দুর্বিষহ হতে পারে, তেমনি বাবা-মায়ের মনের কষ্টও বাড়তে পারে। তবে বাবা-মা বিয়ে ঠিক করলেও নিজের কেমন ছেলে বা মেয়ে পছন্দ তা আগে বলে দিলে তারা তোমাদের পছন্দমতো নির্বাচন করতে পারেন। বাবা-মা নির্বাচন করলেও বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী পরিচিত হয়ে নেওয়া ভালো। আর নিজের যদি কোনো পছন্দ থাকে তাহলে তা বাবা-মা বা অভিভাবকের সাথে আলোচনা করা যায়। এতে তারা বিষয়টি জানতে পারেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও পরামর্শ দিতে পারেন।
গায়ের রং, চেহারা, উচ্চতা ইত্যাদি মানুষ পায় জন্মগতভাবে। এতে নিজের কোনো হাত নেই। তবে কেউ যদি কালো হয় তার জন্য মন খারাপ করা বা নিজেকে দোষ দেওয়া উচিত নয়। এগুলো মানুষের বাইরের সৌন্দর্য। একজন মানুষ প্রকৃতভাবে সুন্দর হতে পারে তার মনের সৌন্দর্যের মাধ্যমে। মন দিয়ে লেখাপড়া করে এবং অন্যান্য কাজ ভালোভাবে শিখে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়। আর চেহারা যেমনই হোক না কেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে, অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করলে এবং ভালো মানুষ হলে সবার মন জয় করা যায়।
বিয়ের পর সুখ পাওয়া অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে গভীরভাবে জানা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়া ইত্যাদি অনেক কিছু সুখী হওয়ার জন্য খুবই দরকার।
বিয়ের পরে স্বামীর ঘর যেমন একটি মেয়ের কাছে অপরিচিত পরিবেশ তেমনি বউটিও স্বামীর বাড়িতে একজন নতুন মানুষ। সুতরাং নতুন পরিবেশে সুখ-শান্তি নির্ভর করে উভয় পক্ষের আচার-ব্যবহারে খাপ খাওয়ানো ও মন-মানসিকতার ওপর।
বিয়ের আগের জীবন একরকম, বিয়ের পর অন্যরকম। বিয়ের পর নারী এবং পুরুষ দু’জনার জীবনেই পরিবর্তন আসে, দায়িত্ব বেড়ে যায়, চলাফেরা সীমিত হয়ে যায়। যেমন- ছেলেরা আগের মতো বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় দিতে পারে না, মেয়েদেরও বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে একটি নতুন পরিবেশে থাকতে হয়। এটাই স্বাভাবিক। জীবনের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছু খাপ খাইয়ে নিতে হয়।
যে সকল পুরুষ বা নারী জীবনে কখনও যৌনমিলন করেনি তাদেরকে ‘কুমার’ বা ‘কুমারী’ বলে।
সতী-পর্দা হচ্ছে মেয়েদের যোনিপথের মুখে গোলাকার একটি পর্দা বা আবরণ। এ পর্দাটি অস্থায়ী যা যৌনমিলন, দৌড়-ঝাঁপ, ব্যায়াম, দুর্ঘটনা ইত্যাদির কারণে ছিঁড়ে যেতে পারে।
সাধারণত যাদের সতী-পর্দা প্রথম যৌনমিলনের সময়ে ছিঁড়ে, তাদের রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে রক্তপাতের সাথে কুমারীত্বের কোনো যোগসূত্র নাই। সতী-পর্দা অন্য যে কোনো কারণেই ছিঁড়ে যেতে পারে। অনেক মেয়ের জন্মের সময়ই এই পর্দা থাকে না। অন্যদের পর্দা হয়তো দৌড়াদৌড়ি, লাফানো, কোনো দুর্ঘটনা বা ডাক্তারি পরীক্ষার সময় ছিঁড়ে যেতে পারে। সুতরাং প্রথম যৌনমিলনের সময় যদি রক্তপাত না হয় তবে এটা ধরে নেয়া যাবে না যে সে কুমারী নয়।
স্বাভাবিক প্রসবের সময় বাচ্চা মায়ের যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। প্রসবের সময় মায়ের তলপেটে ব্যথা হয় এবং যোনিপথ প্রসারিত ও চওড়া হয়। এভাবেই স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে। যদি প্রসবের সময় কোনো ধরনের সমস্যা হয় তবে ডাক্তার মায়ের পেট অপারেশন করে বাচ্চা বের করে নিয়ে আসেন।