যৌনরোগ

নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন খুবই স্বাভাবিক। তবে এতে সামাজিকতা ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক। আমরা অনেকেই মনে করি, কিছু কিছু বিষয়, যেমন- যৌনসম্পর্ক, যৌনরোগ, যৌন আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ঠিক নয়। এ সব বিষয় সম্পর্কে জানলে মানুষ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি জানলে কোনটি করা উচিত (নিরাপদ) এবং কোনটি করা উচিত নয় (ঝুঁকিপূর্ণ), আর করলে তার ফলাফল কি হতে পারে তা জানা যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। যেমন ধরা যাক, যৌনরোগ সম্পর্কে। অনেকেই মনে করতে পারে, যারা যৌনপল্লীতে বা ‘খারাপ জায়গায়’ যায় বা যৌনকর্মীদের সাথে যৌনসম্পর্ক করে, তাদের যৌনরোগ হয়। আমরা অনেকে খারাপ জায়গা বলতে যৌনপল্লী মনে করি। যৌনরোগ হওয়া শুধুমাত্র যৌনপল্লীতে যাওয়ার উপর নির্ভর করে না। অনেকে মনে করে, ‘আমি যেহেতু ও রকম কোনো জায়গায় যাই না, এ বিষয়ে আমার জানার দরকারও নাই।’ কিন্তু যৌনপল্লীতে না গেলেও যৌনরোগ হতে পারে। কোনো সংক্রমিত/আক্রান্ত লোকের সাথে যেকোনো ধরনের যৌনমিলন করলে যৌনরোগ হতে পারে। তাই আমরা যদি যৌনরোগ কি, কীভাবে হয়, কি করলে এই রোগ হবে না, রোগের লক্ষণগুলো কি কি, চিকিৎসা না করালে তার ফলাফল কি হতে পারে এবং এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কোথায় সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে তা পুরোপুরিভাবে জানি, তাহলে আমরা এ রোগ থেকে সাবধান থাকবো, নিজেকে এবং অন্যদেরও রক্ষা করতে পারবো। অবৈধ যৌনমিলন তা যে কোনো বয়সেই হোক না কেন, সেটা অনৈতিক এবং সমাজে ও ধর্মে তা গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কই বৈধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
একটি মেয়ে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার মাসিকের রাস্তা থেকে এক ধরনের সাদা বা হালকা হলুদ স্রাব বের হতে শুরু করে। এই বয়সে স্র্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্র্রাবের পরিমাণ কোনো মেয়ের কম, আবার কোনো মেয়ের বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক স্র্রাব কখনও জমাট বাঁধা, আঠালো বা পাতলা হতে পারে। তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) হলে স্রাবের ধরন অন্যরকম হয়। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ফেনা ফেনা পানির মতো অথবা গন্ধযুক্ত বা গাঢ় হলুদ স্র্রাব বের হতে পারে। অনেক সময় এর সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে। এরকম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (ইনফেকশন) বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার না করলে, বাচ্চা হবার সময় অপরিষ্কার হাতে প্রসব করালে বা সঠিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত না করে জিনিসপত্র ব্যবহার করলে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু যৌনরোগ যেমন : গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি হলেও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের ফলে অস্বাভাবিক স্র্রাব হতে পারে।
একটি মেয়ে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার মাসিকের রাস্তা থেকে এক ধরনের সাদা বা হালকা হলুদ স্রাব বের হতে শুরু করে। এই বয়সে স্র্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্র্রাবের পরিমাণ কোনো মেয়ের কম, আবার কোনো মেয়ের বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক স্র্রাব কখনও জমাট বাঁধা, আঠালো বা পাতলা হতে পারে। তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) হলে স্রাবের ধরন অন্যরকম হয়। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ফেনা ফেনা পানির মতো অথবা গন্ধযুক্ত বা গাঢ় হলুদ স্র্রাব বের হতে পারে। অনেক সময় এর সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে। এরকম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (ইনফেকশন) বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার না করলে, বাচ্চা হবার সময় অপরিষ্কার হাতে প্রসব করালে বা সঠিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত না করে জিনিসপত্র ব্যবহার করলে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু যৌনরোগ যেমন : গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি হলেও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের ফলে অস্বাভাবিক স্র্রাব হতে পারে।
দৈহিক মিলন বা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় তাকে যৌনরোগ বলে। যেমন: গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্লামাইডিয়া, হার্পিস, এইচআইভি-এইডস, হেপাটাইটিস-বি, সি এবং ডি ইত্যাদি। তবে কোনো কোনো সময় এ রোগ অন্যভাবেও ছড়াতে পারে। যৌনরোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ (ইনফেকশন) বা অসুখ হতে পারে। যেমন: সিফিলিস ও গনোরিয়া হলে যৌনাঙ্গে ঘা হয়। এর সাথে স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপি-, চামড়া, গর্ভজাত শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। আবার এইডস, হেপাটাইটিস-বি, সি এবং ডি নামে কিছু যৌনবাহিত রোগ আছে। এসব রোগ হলে যৌনাঙ্গে অসুখ হয় না। কিন্তু শরীরের অন্যান্য জায়গায় সমস্যা বা লক্ষণ দেখা যায়।
যে সমস্ত আচরণ বা কাজের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সুস্থ আরেক জনের শরীরে যৌনরোগ ছড়ায় সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বলে। যৌনরোগ থেকে নিজেকে ও অন্যকে বাঁচাতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিত্যাগ করা উচিত। এ আচরণগুলো হচ্ছে-  আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার না করা  একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা এবং যৌন পল্লীতে গমন করা।  ইনজেকশন নেয়ার সময় সুচ বা সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা  শিরার মাধ্যমে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সময় সুচ/সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা হয় এবং একের অধিক জন একই সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা  যৌনরোগ আছে এমন কারো রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীরে গ্রহণ করা  আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্ম দেয়া/বুকের দুধ খাওয়ানো
বেশিরভাগ যৌনরোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে এই রোগগুলো যৌনমিলন ছাড়া অন্যভাবেও একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে ছড়াতে পারে। যেমন -  যৌনরোগ হয়েছে এমন মানুষের রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য একজনের শরীরে দেওয়া হলে  যৌনরোগীর ব্যবহার করা সুচ ও সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে অন্য কারো শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হলে  যৌনরোগ সংক্রমিত গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকে গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে।
আগেই বলা হয়েছে, যৌনমিলন ছাড়াও অন্যভাবে যৌনরোগ ছড়াতে পারে। যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমন জীবাণুমুক্ত না করা সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার (ইনজেকশন বা নেশাজাতীয় দ্রব্য নেওয়ার সময়), শরীরে সংক্রমিত রক্ত নেওয়ার সময় বা যৌন রোগাক্রান্ত মা সন্তান নিলে সন্তানেরও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে হলে এসব বিষয় মনে রাখতে হবে।
অতিরিক্ত যৌনমিলনে যৌনরোগ হয় এটি ঠিক নয়।
একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক বজায় রাখাটাই নিরাপদ। কিশোর-কিশোরী বয়সে অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক থাকা মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো একজনের যৌনরোগ যেমন: সিফিলিস, গনোরিয়া বা কারো শরীরে যদি এইচআইভি জীবাণু থাকে তবে তা খুব সহজেই অন্যের দেহে ঢুকে যেতে পারে এবং সুস্থ ব্যক্তিকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে। এমনকি এতে আক্রান্ত ব্যক্তি মারাও যেতে পারে। বাইরে থেকে যেহেতু দেখতে সবাই সুস্থ তাই রক্ত পরীক্ষা না করে বোঝার উপায় নেই, কে এসব রোগের ভাইরাস বহন করছে। একাধিক সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা ক্ষতিকর। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক থাকলে কনডম ব্যবহার খুবই জরুরি।
মা যদি কোনো যৌনরোগে (এইডস ও হেপাটাইটিস-বি’র ক্ষেত্রে) আক্রান্ত হয় এবং তার কোনো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মায়ের কাছ থেকে বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায়, বাচ্চার জন্মের সময় বা বাচ্চা জন্ম হওয়ার পরে নবজাতকেরও এ সকল রোগ হতে পারে। আর সিফিলিস, গনোরিয়া রোগের সংক্রমণের ফলে নবজাতকের চোখে ইনফেকশন (কনজাংকটিভাইটিস) হতে পারে। তাই সময়মতো মাকে অবশ্যই যৌনরোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
যৌনরোগে পুরুষ ও মহিলা দু’জনেই আক্রান্ত হতে পারে। পুরুষের এ রোগ হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ বা সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা, ব্যথা করা, পুরুষাঙ্গ থেকে পুঁজ বা পুঁজের মতো স্র্রাব বের হওয়া, পুরুষাঙ্গের চারদিকে ও পায়ুপথের আশপাশে ঘা, চুলকানি, ফোস্কা, অ-কোষ ফোলা, ঘা এবং ব্যথা হওয়া। একজন মহিলা এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে, যোনিপথে অস্বাভাবিক স্র্রাব, যৌনমিলনের সময় ব্যথা করা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হওয়া, যৌনাঙ্গে ঘা, ফোস্কা থাকা, জরায়ুর মুখ লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া এবং তলপেটে ব্যথা হওয়া।
অনেক সময় যৌনরোগ থাকলেও শরীরে কোনো লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দেয় না। সমস্যা না থাকায় যার যৌনরোগ আছে, সে নিজেও বুঝতে পারে না যে, তার এ রোগ হয়েছে। আবার অনেকে যৌনরোগের লক্ষণগুলো ভালোভাবে জানে না, তাই যৌনরোগ হলে বুঝতেও পারে না। এ রকম অবস্থায় তার সাথে যৌনমিলন হলে যৌনরোগ তার কাছ থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
১. মাসিকের রাস্তা দিয়ে হলুদ পুঁজের মতো স্র্রাব বের হওয়া (তবে বেশির ভাগ সময় মেয়েদের কোনো লক্ষণ থাকে না) নারী ২. যৌনাঙ্গে অত্যধিক চুলকানি ৩. কখনো কখনো প্রস্র্রাব ও যৌনমিলনের সময় ব্যথা ও কষ্ট হওয়া
হেপাটাইটিস-বি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা যৌনবাহিতও হতে পারে। অনিরাপদ যৌনমিলন বা অনিরাপদ রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমিত মা থেকে গর্ভের শিশুর মধ্যে হেপাটাইটিস-বি ছড়ায়। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির লিভারে সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলে জন্ডিস দেখা দেয়। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস-বি’র প্রতিরোধক টিকা সহজলভ্য। অন্যান্য টিকার মতো এই টিকা গ্রহণে কোনো শারীরিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি নাই এবং হেপাটাইটিস-বি-এর প্রতিরোধক হিসেবে এই টিকা নেয়া খুবই জরুরি। বর্তমানে আমাদের দেশে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে সরকারি টিকাদান কর্মসূচিতে অন্যান্য রোগের টিকার সঙ্গে হেপাটাইটিস-বি’র টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেসরকারি ক্লিনিক এবং অনেক প্রাইভেট ক্লিনিকেও হেপাটাইটিস-বি’র টিকা পাওয়া যায়।
যৌনরোগের কোনো লক্ষণ না থাকলেও রোগ আছে সন্দেহ হলেই স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর কাছে যাওয়া উচিত। সময়মতো এবং সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করালে বেশির ভাগ যৌনরোগই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
যৌনরোগ হলে দৈনন্দিন জীবনের সবরকম কাজকর্মই স্বাভাবিক নিয়মে করা যাবে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের অন্যান্য বিধিনিষেধ সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। পরবর্তীতে এ ধরনের রোগ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
যৌনরোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অথবা যৌনরোগ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে দেরি না করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। অনেকে গ্রাম্য/হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে বা বাজারে যারা ক্যানভাস করে তাদের কাছে রোগের চিকিৎসা নিতে যায়। রাস্তার ক্যানভাসাররাও এসব রোগের গ্যারান্টিসহ চিকিৎসার কথা প্রচার করে এবং বিভিন্ন ধরনের টোটকা ওষুধ বিক্রি করে। কিন্তু এদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিলে যৌনরোগ ভালো তো হয়ই না বরং পরবর্তীতে আরো বেশি জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ক্যানভাসার ও হাতুড়ে ডাক্তাররা প্রায়শই মানুষকে চিকিৎসার নামে প্রতারিত করে থাকে। তাই কোনো অবস্থাতেই এদের কাছে না গিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার অথবা সেবা প্রদানকারীর কাছে যেতে হবে। রোগাক্রান্ত অবস্থায় কোনো লক্ষণ থাকুক বা না-ই থাকুক, যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে যাতে করে সঙ্গীর মধ্যে যৌনরোগ না ছড়াতে পারে। ডাক্তার বা সেবাপ্রদানকারীর কাছে সব রকম সমস্যা খোলাখুলি জানাতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো রকম লজ্জা করলে চলবে না। ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিজের ও যৌনসঙ্গীর চিকিৎসা করাতে হবে এবং অন্যান্য নিয়ম মেনে চলতে হবে। উপসর্গ চলে গেলেও ঔষধের পূর্ণমাত্রা শেষ করতে হবে। সঙ্গীর চিকিৎসা না করালে তার কাছ থেকে আবার রোগ ছড়িয়ে যাবার ভয় থাকে। কারো যৌনরোগ হয়েছে বলে মনে হলে সঠিক চিকিৎসার জন্য সমস্যাটি অবশ্যই পিতামাতা বা পরিবারের অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে খুলে বলবে। কারণ এ সমস্যা সমাধানে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য একমাত্র তারাই তোমাকে আন্তরিকভাবে সহায়তা করবেন।
সময়মতো ও সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে যৌনরোগ থেকে বিভিন্ন জটিলতা বা সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা পরে চেষ্টা করেও আর ভালো হয় না। কিছু কিছু যৌনরোগে-  রোগী বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে (আর বাচ্চা হবে না)  মায়ের পেটে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে  শিশু অন্ধ হয়ে জন্মাতে পারে  বিকলাঙ্গ/পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিতে পারে  জরায়ু-মুখে ক্যান্সার হতে পারে  এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস-এর ভাইরাস সহজে আক্রমণ করতে পারে  মানসিক চাপ হতে পারে, এমনকি মানসিক বৈকল্য হতে পারে।
যৌনরোগ আছে এমন কারো সাথে যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার না করলে একবার যৌনমিলনেও এই রোগ হতে পারে। কারণ একবার যৌনমিলন হলেও এই রোগের জীবাণু রোগীর শরীর থেকে তার সঙ্গীর মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।
সিফিলিস, গনোরিয়া এক ধরনের যৌনরোগ (১৫ নং পাতায় যা বলা হয়েছে)। যার শরীরে যৌনরোগ (যেমন : সিফিলিস বা গনোরিয়া) আছে, তার সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলন হলে এই রোগ হতে পারে। এ ছাড়া সিফিলিস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলেও এ রোগ হতে পারে। তাই এসব রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
 যৌনরোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে শুধু বিশ্বস্ত একজনের সাথে যৌনসম্পর্ক রাখতে হবে। এটা দু’জনের জন্যই প্রযোজ্য। দু’জন সঙ্গীর যদি একজনেরও অন্য কারো সাথে আগে বা বর্তমানে যৌনসম্পর্ক থাকে তাহলে যৌনরোগ হতে পারে  যদি কোনো একজনের যৌনরোগ থাকার সম্ভাবনা থাকে তবে প্রতিবার যৌনমিলনের সময় সঠিক নিয়মে কনডম ব্যবহার করতে হবে  একবার মাত্র ব্যবহার করে বাতিল করতে হয় এমন সুচ ও সিরিঞ্জ (ডিসপোজেবল সুচ ও সিরিঞ্জ) দিয়ে ইনজেকশন নিতে হবে  কখনও রক্তের প্রয়োজন হলে রক্ত নেবার আগে এতে যৌনরোগের জীবাণু আছে কি না পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে রক্ত নিতে হবে  ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
আমরা অনেকে ‘খারাপ জায়গা’বলতে যৌনপল্লীকেই মনে করি। শুধু পতিতালয়ে বা যৌনপল্লীতে যাওয়ার উপর যৌনরোগ হওয়া নির্ভর করে না। যার যৌনরোগ আছে তার সাথে কনডম ব্যবহার না করে যেকোনো জায়গায় যৌনমিলন হলে এ রোগ হতে পারে। সব ধরনের যৌনকর্মে যৌনরোগ ছড়াতে পারে। যৌনকর্মীদের সাথে অনেকের যৌনমিলন হয়, তাই তাদের যৌনরোগ হবার এবং তাদের কাছ থেকে এ রোগ ছড়াবার ঝুঁকি সব সময়ই বেশি থাকে। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি যৌনকর্মীদের কাছে গিয়ে এইচআইভি সংক্রমণ বা অন্য কোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলো। পরে সেই ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে বা অন্য কোনো মেয়ে/ছেলের সাথে যৌনমিলন করলে তার কাছ থেকে এ রোগগুলো অন্যদের মাঝেও সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত মা থেকে এরপর সন্তানের মধ্যেও এভাবে রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই কনডম ব্যবহার করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে রক্ষা করা যায়। একজন পুরুষ বা নারী যদি একাধিক যৌনসঙ্গীর সাথে যৌনমিলন করে এবং এদের মধ্যে যদি একজনেরও যৌনরোগ থাকে, তবে তার সাথে যৌনমিলনের সময় এই রোগ পুরুষের/নারীর মধ্যে চলে আসে। অন্য কোনো সঙ্গী যখন সেই নারী/পুরুষের সাথে যৌনমিলন করে তখন তার মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে যায়।