বয়: সন্ধি

অনেক কারণে তোমাদের দুর্বল লাগতে পারে। এর মধ্যে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগ অন্যতম। পরিমিত পরিমাণে ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেয়া ও ব্যায়াম করার পরেও অসুস্থ বা দুর্বল লাগলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কৈশোরে শরীরের যথাযথ বৃদ্ধি ও সুস্থ খাবারের জন্য পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শরীরে রোগ প্রতিরোধক শক্তি সঞ্চয় করে। পুষ্টি হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করা থেকে শুরু করে খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয় অর্থাৎ পুষ্টি বলতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলাফলকে বোঝায়।
কারো কারো মুখে এ সময় ব্রণ বা দানা দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ব্রণ আকারে ছোট হয় এবং এমনিতেই চলে যায়। ব্রণে হাত দেয়া উচিত নয়। এ বয়সে ব্রণ হবার মূল কারণ শরীরে হরমোনের পরিবর্তন। তাছাড়া, মানসিক দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অতিরিক্ত চা, কফি ও ধূমপান করার কারণেও ব্রণ হতে পারে। মুখ তেলতেলে থাকলে ব্রণ হয়। প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খেলে, বেশি করে পানি পান করলে এবং মুখমণ্ডল পরিষ্কার রাখলে ব্রণ কম হয়। অল্প পরিমাণ সাবান দিয়ে মাঝে মাঝে মুখ ধুয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলবে। নখ দিয়ে কখনও ব্রণ খুঁটবে না। ব্রণ থেকে বেশি দাগ হয়ে গেলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবে।
কৈশোরকালীন সময়ে শরীর দ্রুত বাড়ে। এই দ্রুত বৃদ্ধি ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক উচ্চতা ও গঠন কেমন হবে তা নির্ভর করে খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির উপর। তবে, এ বয়সে সবার বৃদ্ধি এক রকম হয় না। তাই দেহের বৃদ্ধির জন্য এ সময় প্রচুর আমিষ ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দেহের চাহিদা অনুযায়ী এ সময়ে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করা হলে শরীরের বৃদ্ধি পুরোপুরি হয়। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এই বৃদ্ধির গতিতে তারতম্য হতে পারে। যার কারণে সবাই একভাবে বাড়ে না বা লম্বা হয় না। যেমন, কারো বাবা-মা যদি লম্বা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তাদের সন্তানও লম্বা হয়, আবার বাবা-মা কারও উচ্চতা কম হলে সন্তানেরও উচ্চতা কম হতে পারে। এসব কারণে এ বয়সে (১০-১৯ বছর) সবার বৃদ্ধি একরকম হয় না। তবে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শারীরিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ অনেক সময় দ্রুত বাড়ে আবার কেউ ধীরে ধীরে বাড়ে। এ বৃদ্ধি কারো কারো ক্ষেত্রে একটু অল্প বয়স হতে শুরু হয় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে দেরিতে শুরু হয়। সেজন্য একই বয়সের একটি ছেলেকে একটি মেয়ের তুলনায় অথবা একটি ছেলেকে আরেকটি ছেলের তুলনায় ছোট কিংবা বড় দেখায়। বয়ঃসন্ধিকালে তোমাদের দেহে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। তোমাদের দেহের এসব পরিবর্তন হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। হরমোন হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা দেহে তৈরি হয়। মনে রেখো, ছেলে-মেয়ে উভয়েরই হরমোন আছে, তবে তাদের হরমোন আলাদা এবং এ কারণে তাদের পরিবর্তনও এক রকম নয়। হরমোনের কারণে এ সময় ছেলেদের মুখে দাড়ি ও গোঁফ গজায় এবং দেহে লোম বেশি হয়। অপরদিকে, মেয়েদের স্তন বৃদ্ধি পায়। ছেলে ও মেয়েদের বগলে ও যৌনাঙ্গে এবং কোনো কোনো ছেলের বুকেও লোম গজায়। ছেলেদের বগল ও যৌনাঙ্গে লোম গজাবার ২/৩ বছর পর দাড়ি ও গোঁফ গজায়। লোম বা দাড়ি-গোঁফ সবার সমান হয় না এবং এর উপর কারো পুরুষত্ব নির্ভর করে না।
যখন একটি মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। এই বয়সে মেয়েদের দেহে হরমোন তৈরি হয়। হরমোনের কারণে মেয়েদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যেমন- উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয়, বগলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায় ইত্যাদি। এই পরিবর্তনগুলোই হচ্ছে একটি মেয়ের বড় হয়ে ওঠার স্বাভাবিক লক্ষণ।
মেয়েরা যখন বড় হয় তখন প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু বের হয়ে ডিম্ববাহী নালীতে আসে। একই সময় জরায়ুতে রক্তে ভরা নরম পর্দা তৈরি হয়। যদি এ সময় যৌনমিলন হয় তাহলে শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণু মিলিত হয়ে ভ্রুণ তৈরি হয়। এই ভ্রুণ রক্তে ভরা নরম পর্দায় গিয়ে বসে ও ধীরে ধীরে বড় হয়ে শিশুতে পরিণত হয়। যদি শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলন না হয়, তাহলে এই পর্দার আর প্রয়োজন হয় না। তখন এই রক্তে ভরা পর্দা ডিম্বাণুসহ মাসিক হিসেবে যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। কোনো আঘাত বা অসুখের কারণে এই রক্ত পড়ে না। এ বয়সে একটি মেয়ে যে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা লাভ করেছে, মাসিক তারই প্রমাণ।
স্বাভাবিক অবস্থায় মাসিক প্রতিমাসেই হয়ে থাকে এবং ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। সাধারণত মেয়েদের প্রতি ২৪ থেকে ৩২ দিন অর্থাৎ গড়ে ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়। একে মাসিক চক্র বলে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ ২৮ দিনের চক্রটি কম বা বেশি হতে পারে।
মেয়েদের শরীরে জরায়ু থেকে প্রতি মাসে মাসিক হয়। যেহেতু মেয়েদের মতো ছেলেদের জরায়ু নেই, তাই তাদের মাসিক হয় না।
মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত মেয়েদের ১২-১৩ বছর বয়সে মাসিক শুরু হয়। তবে কারো কারো এর আগে বা পরেও হতে পারে। এজন্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে মাসিক শুরু হওয়ার আগে এ ব্যাপারে জানা থাকে না বলে প্রথম মাসিকের সময় অনেকেই ভয় পায়। মেয়েরা যখন বড় হতে শুরু করে তখন মা অথবা অন্যান্য মহিলা যেমন- বড় বোন, ভাবি তাকে আগে থেকে এ ব্যাপারটা যদি বুঝিয়ে বলেন তবে মেয়েটি লজ্জা ও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে।
অধিকাংশ মেয়েরা মনে করে যে, মাসিক একটি ঝামেলার ব্যাপার কিন্তু এটি জীবনের একটি বাস্তব সত্য। এই রক্ত পড়া সাধারণত ১২-১৩ বছর থেকে শুরু হয় এবং ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে বন্ধ হয়ে যায়। মাসিকের রক্তের পরিমাণও কম-বেশি হতে পারে। মাসিকের রক্তের পরিমাণ কতটুকু হবে বা কতদিন মাসিক থাকবে তা নির্ভর করে হরমোন, শারীরিক গঠন, রক্তের পরিমাণ, বংশগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির ওপর। মেয়েদের প্রথম মাসিক হলে কোনো কোনো সময় তা অনিয়মিত হয়। কোনো মাসে হয়, আবার কোনো মাসে হয় না। অধিকাংশ মেয়ের কয়েক বছরের মধ্যে এই অনিয়মগুলো দূর হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এই অনিয়ম চলতে থাকলে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সময়ে রক্ত যাতে বাইরে গড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড, পরিষ্কার কাপড় বা তুলা ব্যবহার করতে হয়। এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে কয়েকবার বদলাতে হয়। এছাড়া নানা মাপের জাংগিয়া বা প্যান্টি পাওয়া যায়। কাপড় বা তুলার সাথে এগুলো ব্যবহার করা যায়। এসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন শুকনা কাপড় পরতে হবে, তা না হলে একই কাপড় যদি বারবার ব্যবহার করা হয় তবে সেগুলো সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে/বাতাসে শুকাতে হবে। মাসিক চলাকালীন সময়ে নিয়মিত গোসল করতে হবে, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরতে হবে, পুষ্টিকর সব ধরনের খাবার খেতে হবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।
মাসিকের সময় পরিষ্কার তুলা বা প্যাড ব্যবহার করাই ভালো। তবে তা সম্ভব না হলে পরিষ্কার শুকনা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। মাসিকের সময় কাপড় বা প্যাড না ব্যবহার করলে মাসিকের রক্ত কাপড় বা বিভিন্ন জায়গায় লেগে যেতে পারে। এটি একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর তেমনি বিব্রতকর।
মাসিকের সময় পরিষ্কার প্যাড ব্যবহার করা সম্ভব না হলে পরিষ্কার শুকনা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা পরিষ্কার ও শুকনা থাকা জরুরি। কাপড় প্রতিবার ব্যবহারের পরে ভালোভাবে সাবান ও গরম পানিতে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার জায়গায় রাখতে হবে। কারণ কড়া রোদে শুকালে রোগ জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে না। তা না হলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকবে। কাপড়, তুলা বা প্যাড যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রয়োজন মতো তা পরিবর্তন করতে হবে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি বার, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কম বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে।
মাসিকের সময় কারো কারো কোমরে বা পেটে অল্প অল্প ব্যথা হতে পারে। শরীরের এক বিশেষ হরমোনের জন্য মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচন (ছোট হওয়া) ও প্রসারণ (বড় হওয়া) ঘটে। ফলে তলপেটে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। তাছাড়া প্রথম প্রথম মাসিক হলে মেয়েরা অস্বস্তিতে ভুগতে পারে। এ সময় বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম বা গরম সেক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা হলে, বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
মাসিক একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই মাসিক হলে স্বাভাবিক চলাফেরায় কোনো বাধা নেই। এসময় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে।
স্বাভাবিকভাবে মাসিকের সময় শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায়। যদি কেউ আগে থেকে অপুষ্টিতে ভোগে তাহলে এই রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, ফলে শরীর দুর্বল বা ক্লান্ত লাগতে পারে। মাসিকের সময় মাছ, মাংস, ডিমসহ সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তবে খুব বেশি রক্ত গেলে বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিক একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ সময় স্বাভাবিক সব কাজ করা যায়। এ সময় জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ হতে থাকে, তাই বেশি দৌড়-ঝাঁপ করলে বা ভারি কাজ করলে জরায়ুর ওপর চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে মাসিকের রক্ত ঝরার পরিমাণ বেশি হতে পারে। এছাড়া মাসিকের সময় প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরতে থাকে এবং কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করতে হয়। ফলে পরার কাপড়ে রক্ত লেগে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই বেশি দৌড়-ঝাঁপ বা ভারি কাজ না করাই ভালো। এ সময় দৈনন্দিন স্বাভাবিক চলাফেরা এবং পারিবারিক সব কাজ করা যাবে।
প্রথম প্রথম মিনস্ বা মাসিক হলে একটু অস্বস্তি লাগতে পারে এবং চলাফেরা করতে ও সবার সামনে যেতে বিব্রতবোধ হতে পারে। তবে মানসিকভাবে এই শারীরিক পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে তা কেটে যাবে।
মাসিকের সময়ে অনেকের কোমরে বা পেটে ব্যথা অথবা মাথা ব্যথা হতে পারে। বিশ্রাম, গরম সেক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু ব্যথা যদি বেশি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে ব্যথা কমানোর ঔষধ খেতে হবে। এ সময় স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করা যায়। মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হলে বোতলে গরম পানি নিয়ে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়। এ সময় স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সময় মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া যাবে না-এটি একবারেই ঠিক নয়। বরং এই সময় বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তা না হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। অনেকে মনে করে মাসিকের সময় টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না- এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কেননা লেবু, কমলা, তেঁতুল, আমলকি, জলপাই ইত্যাদি টক জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরে আয়রন-এর শ্বসন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। কোনো খাবারই মাসিকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না। কিশোর বয়স শরীর গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর শরীর গঠনে সাহায্য করে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। সুতরাং এ বয়সে বিশেষ করে মাসিকের কারণে কোনো খাবার বেছে খাওয়া বা বাদ দেয়া উচিত নয়।
মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে তখন তাদের যোনিপথ থেকে এক ধরনের স্বচ্ছ সাদা বা হালকা হলদে স্র্রাব বের হতে শুরু করে। স্রাবের পরিমাণ কোনো মেয়ের কম, আবার কোনো মেয়ের বেশি হতে পারে। যোনিস্র্রাব বের হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বাভাবিক নিয়মেই স্রাবের পরিমাণ কখনো বাড়ে বা কখনো কমে। স্র্রাব কখনও শুষ্ক ও আঠালো, আবার কখনও ভেজা ও পাতলা হতে পারে। যেহেতু যোনিপথে স্র্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার তাই এর জন্য চিন্তিত হবার বা চিকিৎসা নেবার কোনো দরকার নেই। তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ হলে প্রচুর পরিমাণে গন্ধযুক্ত সবুজ বা হলুদ স্র্রাব বের হয়। অনেক সময় এর সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত ১০-১২ বছর বয়সে একটি ছেলের শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। যেমন- উচ্চতা বাড়তে থাকে, কাঁধ চওড়া হয় এবং মাংসপেশি শক্ত হতে থাকে। ছেলেরা যে বড় হচ্ছে তার লক্ষণ হলো দাড়ি-গোঁফ গজানো। এ সময় গলার স্বরেরও পরিবর্তন হয়।
গলার স্বর মানুষের ভোকাল কর্ড নামক অঙ্গের ওপর নির্ভর করে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের ভোকাল কর্ড পরিবর্তিত হয়। যার ফলে তাদের গলার স্বর ভেঙ্গে যায় এবং ভারি হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের দেহে হরমোন বা রস তৈরি হয়। দেহের বিভিন্ন পরিবর্তন হরমোনের কারণে হয়। ছেলেমেয়ে উভয়েরই হরমোন আছে, তবে তাদের হরমোন আলাদা এবং এ কারণে তাদের শারীরিক পরিবর্তনগুলোও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে ছেলেদের দাড়ি-গোঁফ ওঠে, মেয়েদের ওঠে না।
একটি ছেলে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছায় তখন তার ‘বীর্য’ তৈরি হতে শুরু করে। ‘বীর্য’ যখন ঘুমের মধ্যে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে স্বপ্নদোষ বলে। একটি ছেলে যে বড় হচ্ছে স্বপ্নদোষ তারই প্রমাণ। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো কোনো সময় যৌনবিষয়ক চিন্তা বা স্বপ্নের সাথে স্বপ্নদোষের সম্পর্ক থাকে। তবে মনে রাখতে হবে বাংলায় ‘স্বপ্নদোষ’ বলা হলেও এটি দোষের নয়। স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত একটি ছেলে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছায় তখন তার বীর্য থলিতে বীর্য (ধাতু) তৈরি হতে শুরু করে এবং স্বপ্নদোষ হলে স্বাভাবিক নিয়মে শরীর থেকে বীর্য বের হয়ে আসে। বীর্য যখন ঘুমের মধ্যে যৌনাঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন তাকে স্বপ্নদোষ বলে। যৌনবিষয়ক চিন্তা করলে বা বিভিন্ন উত্তেজক স্বপ্ন দেখলে কখনো কখনো স্বপ্নদোষ হতে পারে। একটি ছেলে যে বড় হচ্ছে স্বপ্নদোষ তারই লক্ষণ। যদিও কারো স্বপ্নদোষ না হওয়াও কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় এবং এর অর্থ এই নয় যে, তার দেহে বীর্য ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না।
স্বপ্নদোষ কোনো অসুখ নয়। বয়ঃসন্ধিকালে স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীরের কোনো শক্তি বের হয় না এবং শরীর দুর্বলও হয় না। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ছেলেদের শরীরের ভিতর বীর্য তৈরি হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মেই আবার তা শরীর থেকে বের হয়ে যায়। শরীরের ভিতরে বীর্য ধরে রাখার কোনো উপায় নেই। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে স্বপ্নদোষ হয়ে কাপড় ভিজে যাওয়ায় অনেক ছেলেই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। কিন্তু স্বপ্নদোষ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। প্রায় সব ছেলেরই এ রকম হয়ে থাকে এবং এটি তোমার বেড়ে ওঠায় কোনো বাধা নয়। তবে যদি কেউ প্রয়োজন মনে করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে।
স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটি কোনো রোগ নয়। তাই এর কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। স্বপ্নদোষ শারীরিক কোনো অসুবিধা করে না অথবা শরীরকে দুর্বলও করে না এবং এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে অত্যধিক স্বপ্নদোষ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। স্বপ্নদোষের ফলে বীর্য বের হয়ে কাপড় নোংরা হয়ে যেতে পারে তাই এই সময় অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অত্যধিক পরিশ্রমের সাথে স্বপ্নদোষের কোনো সম্পর্ক নেই।
রক্ত থেকে বীর্য তৈরি হয় না। ১২-১৩ বছর বয়স থেকে বীর্য তৈরি শুরু হয় এবং এটি সারা জীবন চলতে থাকে। একটি ছেলে যে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা লাভ করেছে, বীর্য বের হওয়া তারই প্রমাণ। তোমার বীর্য কোনো সময়ই ফুরিয়ে যাবে না। তাই কারো স্বপ্নদোষ হলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। বয়ঃসন্ধিকালে লিঙ্গ শক্ত হওয়ায় তুমি হয়তো অবাক হতে পারো এবং অস্বস্তি বোধ করতে পারো। এ ধরনের অস্বস্তি থেকে তোমার মন অন্যদিকে নেওয়ার জন্য এ সময় তুমি অন্য কিছু সম্পর্কে চিন্তা করতে পারো। এমনকি তোমরা পছন্দের গল্প, কবিতার বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদিও পড়তে পারো।
কারো কারো স্বপ্নদোষ ঘন ঘন হয়, কারো কারো কম হয়। আবার কারো কারো হয়ই না। এ সবই স্বাভাবিক। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই।
বড় হওয়ার সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। এ পরিবর্তনের সময়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদেরকে বড় ভাবতে শুরু করে এবং নিজেদের খেয়ালখুশি মতো চলতে চায়। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যে, মা-বাবারা তাদের এ চলাফেরা মেনে নিতে চান না। তাদের কাছে তোমাদের বয়সি কিশোর-কিশোরীরা এখনও ছোট। সেজন্যই এ সময়ে বড়দের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হতে পারে। তাছাড়া, অনেক সময় ছেলেমেয়েরা মন খুলে অন্য কারো সাথে সমস্যার কথা বলতে পারে না। এ সময়ে নিজের চিন্তা এবং সমস্যাগুলি যদি পরিবারের অন্যদের সাথে খোলাখুলিভাবে আলাপ করে নেয়া যায় এবং সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা যায় তাহলে বিভিন্ন সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।
ছেলে-মেয়েরা যখন বড় হতে শুরু করে,তখন মা-বাবারা তাদের প্রতি আরো যত্নশীল হন। কারণ, এই বয়সটা ভবিষ্যৎ গড়ার বয়স। দেখা যায় যে, এই বয়সে ছেলেমেয়েরা নানারকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও আবেগের ফলে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে থাকে। তাই সন্তানের ভালোর জন্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবে মা-বাবা এই বয়সে ছেলেমেয়েদের শাসন করেন, ঘরের বাইরে খেলতে যেতে বা একা একা বাইরে যেতে নিষেধ করেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেমেয়েদের আচরণের প্রত্যাশিত পরিবর্তনের প্রতিফলন দেখতে না পেলে বাবা মা শুধরে দিতে চান।
যখন একটি ছেলে বা মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে (১০-১২ বছরে) পৌঁছায় তখন তার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মনেরও নানা ধরনের পরিবর্তন হয় এবং আরো অনেক নতুন নতুন বিষয়ের সাথে তাদের পরিচয় হয়। তাছাড়া এ সময় ছেলেমেয়েদের মনেরও পরিবর্তন হয়। তারা খুব আবেগপ্রবণ থাকে এবং নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে চায়। তবে নতুন অনুভূতি ও আবেগের বশে ছেলেমেয়েরা এ বয়সে ভুল কাজ করতে পারে যা তাদের জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ছেলেমেয়েরা যেন ভুল না করে সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারে সে জন্য মা-বাবা ও অভিভাবকগণ বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেন এবং শাসনও করতে পারেন। এই বয়সে আবেগের কারণেই বাবা-মা কোনো কাজ করতে নিষেধ করলে কিশোর-কিশোরীদের রাগ হতে পারে যা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। তবে নিজেদের ভালোর জন্যই এ বয়সে উপদেশ অপছন্দ হলেও তা মেনে নিয়ে যদি মা-বাবার সাথে খোলামেলা আলাপ করা হয়, তাহলে মা-বাবা ছেলেমেয়েদের বুঝতে পারেন এবং সমস্যাও অনেক কমে যায়।
এ বয়সটা আসলে নিজেকে ঠিকমতো গড়ে তোলার বয়স। বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো লেখাপড়ার ক্ষতি। এমনকি এর কারণে অনেক ছেলেমেয়ে বিপথেও যেতে পারে। অন্যান্য সামাজিকতা ও খেলাধুলার মাঝে লেখাপড়ার গুরুত্ব কমে যেতে পারে। জীবনে সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় ও বয়স আছে। সন্ধ্যাবেলা লেখাপড়ার সময়। নিয়মমতো লেখাপড়া করা ভবিষ্যত গড়ার জন্য খুবই জরুরি। তাই সন্তানের ভালোর জন্য বাবারা এ রকম বলে থাকেন। এছাড়া নিরাপত্তার কথা ভেবেও মা-বাবা তোমাদের সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে বলেন।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান চোখে দেখা হয় না এবং তাদের সাথে একই রকম ব্যবহার করা হয় না। জন্মের পর থেকেই বিভিন্নভাবে তারা এ বৈষম্যের শিকার হয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের সাথে বাবা-মা ও পরিবারের এ আচরণের তারতম্য আরো বেশি করে নজরে আসে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েটির অবস্থান ছেলেটির চেয়ে নিচে। যথাযথ সুযোগ পেলে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই সমানভাবে যেকোনো কাজ করতে পারে। নিরাপত্তা ও সম্মানের কারণে কিশোরী মেয়েদের ব্যাপারে বাবা-মা আরো বেশি চিন্তিত থাকেন। স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও বন্ধু/বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে মেয়েদের ওপর বেশি বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেন। এ সময়ে মেয়েরা যাতে কোনো রকম যৌন নিপীড়নের শিকার না হয় সে ব্যাপারে বাবা-মা বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন। তোমরা যারা কিশোর-কিশোরী তারা সকল ব্যাপারে বাবা-মা, ভাই-বোন অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করবে। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সাথে তোমরা একমত না হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এতে তোমাদের সমস্যা দূর হবে এবং বাবা-মায়ের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
সাধারণত মা-বাবারা সবসময় পরামর্শ দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে চালাবার চেষ্টা করেন। তবে তাদের আচরণ হতে হবে বন্ধুসুলভ। কিন্তু‘কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে কিছু বিশেষ বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন, সেটা তাদের ভালোর জন্যই। যদি মা-বাবারা অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন এবং তাদেরকে যেখানে সেখানে যেতে দেন তাহলে ঐ ছেলেমেয়েরা অনেক সমস্যায় ও অসহায় অবস্থায় পড়তে পারে। অন্যদিকে মা-বাবারা যদি বেশি কঠোর হন তবে ছেলেমেয়েরা অস্থির হয়ে পড়বে এবং একদিন জেদি হয়েও উঠতে পারে। এমনকি জেদের বশে খারাপ কাজ বা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতেও পারে। মা-বাবা ও ছেলেমেয়েদের মাঝে তাই খোলামেলা আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার।
মা-বাবারা ছেলেমেয়েদের নিয়ে, বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে ভয় পান। পারিপার্শি¦ক কারণে মেয়ে-সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বলেই তাদের নিয়ে মা-বাবারা বেশি চিন্তায় থাকেন। কারণ যদি কোনো মেয়ে কোনো কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় তবে তা তার জন্য ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছেলেদের নিয়েও আমাদের সমাজ ও পরিবেশের কারণে অনেক রকম ভয় থাকতে পারে। মা-বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদের ভালো চান এবং সাবধান থাকতে চান বলেই তাদের নিয়ে ভয় পান বা দুশ্চিন্তা করেন। সন্তানের কল্যাণ ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই মা-বাবারা কিশোরী মেয়েদের বেশি চোখে চোখে রাখতে চান। এতে তোমাদের স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে এমন ভাববার কোনো কারণ নেই।
কিছু কিছু পরিবারে ছেলেকে মেয়ের তুলনায় বেশি আদর ও যত্ন করা হয়, কারণ তারা মনে করেন ছেলে ভবিষ্যতে উপার্জন করে পরিবারের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেবে আর মেয়ে যাবে অন্যের সংসারে। এ ধারণা ঠিক নয়। আজকাল মেয়েরাও ছেলেদের মতো পরিবারে সমান ভূমিকা রাখছে। সমাজেও এখন ধীরে ধীরে মেয়েদের ভূমিকা বদলে যাচ্ছে। সন্তান হিসেবে ছেলে ও মেয়ে সবারই রয়েছে সমান অধিকার।
ছেলে-মেয়ের মাঝে বিরাজমান বৈষম্য দূর করার জন্য বাবা-মার দায়িত্ব প্রথম থেকে ছেলে-মেয়েকে সমান চোখে দেখা। মা-বাবাকে পরিবারে এমন মানসিকতা ও পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন ভাইবোনেরা নিজেদের সবদিক থেকে সমান বলে বিশ্বাস করতে শেখে। পরিবারে, স্কুলে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদেরও একে অপরকে সমান বলে ভাবা উচিত। পরস্পরকে সমান মর্যাদা ও সম্মান দেয়া উচিত। আমাদের দেশে ও সমাজে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে মেয়েদের লেখাপড়া, প্রতিষ্ঠা ও স্বাবলম্বী হওয়া, অধিকার আদায় ও নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারিভাবে ও অন্যান্য সকল পর্যায়ে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশার কথা, এতে করে বৈষম্য কমে আসছে।
কাজ করতে গেলে মাঝে মাঝে ভুল হতেই পারে এবং সেই ভুলের জন্য মার বকা দেয়া দোষের কিছু নয়। মায়েরা সাধারণত সন্তানের ভালোর জন্যই শাসন করেন। সেটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। আসলে এ বয়সে ছেলে-মেয়েদের অল্পতেই রাগ করতে দেখা যায়। এটা কৈশোরের একটা প্রভাব। এ সময় প্রায়ই কিছু ভালো লাগে না এবং প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাই অনেক সময় মায়ের উপদেশকেও বকাঝকা মনে হতে পারে।
কিশোর বয়সি ছেলে-মেয়েরা নিজেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্বন্ধে কৌতূহলী থাকে। এই পরিবর্তন সম্পর্কে মা-বাবার সাথে আলোচনা করাই যায়। কিন্তু আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মা-বাবা এসব আলোচনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বলেই ছেলেমেয়েরা এসব বিষয় বাবা-মাকে জানাতে চায় না। অন্যদিকে সমবয়সি হবার কারণে বন্ধুদের সাথে তোমাদের সম্পর্ক সহজ ও খোলামেলা। একই বয়সের বলে তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের সমস্যাও একই ধরনের হতে পারে। তাই স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য বিষয়ের মতো লিঙ্গজনিত সমস্যাগুলো নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বলা সহজ। তবে মনে রাখবে, তোমাদের বয়সি বন্ধুরা তোমারই মতো। তারাও এসব বিষয়ে খুব বেশি তথ্য জানে না। তারা যা জানে তা ভুলও হতে পারে। মা-বাবা যেহেতু সন্তানের অভিভাবক এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অনেক বেশি। তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে বন্ধুদের চেয়ে বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা করা ভালো।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কিছু দৈহিক পরিবর্তন ঘটে যা তাদেরকে পুরুষদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। তোমরা হয়তো জানো যে, ছেলেরা, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরাও রাস্তাঘাটে মেয়েদের কিংবা মহিলাদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। কোনো কোনো সময় মেয়েরাও ছেলেদের উত্যক্ত করে থাকে। উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী উত্ত্যক্ত করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তুমি যদি মেয়ে হও, রাস্তাঘাটে কেউ তোমাকে উত্ত্যক্ত করলে ভয় পাবার কিছু নেই। যদিও ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর। তারপরও নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলাই এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ। স্কুল থেকে ফেরার পথে কিংবা অন্য কোথাও আসা-যাওয়ার সময় কয়েকজন মিলে একসাথে চলার চেষ্টা করো। এ ধরনের পরিস্থিতি কৌশলে মোকাবেলা করাই ভালো, যাতে উত্ত্যক্তকারী আরো বেশি প্রতিশোধ পরায়ন না হয়ে উঠতে পারে। যদি সমস্যা গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে তোমার মা-বাবা এবং শিক্ষকদের জানাতে পারো। প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। আজকাল মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (যেমন- ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি) তরুণ ছেলেমেয়েদের প্রায়ই উত্ত্যক্ত করা বা যৌন হয়রানি করা হয়। এ সকল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে গোপনে বা জোর করে কোনো কোনো উত্ত্যক্তকারী নানারকম আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করে ও ছড়িয়ে দেয় অথবা ছড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট-এর মাধ্যমে কেউ যেকোনো রকম উত্ত্যক্ত করলে নিজের মধ্যে চেপে না রেখে সাথে সাথে মা-বাবা বা অভিভাবককে জানাবে। তা না হলে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। তাদের না জানানোর ফলে তোমার বাবা-মা ভুল বুঝতে পারেন। এমনকি তুমি তাদের সন্দেহের কারণও হতে পারো। বিষয়টি জানলে তারা তোমাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে নিরাপত্তার দায়িত্বও নেবেন। মনে রেখো, তোমার বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে ফেইসবুক/টুইটার ব্যবহার করা বেআইনি। তুমি যদি ছেলে হও, হতে পারে তোমার বন্ধুরাই বিভিন্নভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে এবং তোমারও তাদের সাথে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। মনে হতে পারে যে, এতে দোষের কিছু নেই, এটা কেবল মজা করা। কিন্তু সবারই জানা প্রয়োজন যে, সরাসরি অথবা মোবাইল বা ইন্টারনেট-এর মাধ্যমেই হোক কাউকে উত্ত্যক্ত করা অত্যন্ত খারাপ কাজ। এ ধরনের আচরণ কখনো কখনো যৌন নিপীড়ন এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের পর্যায়ে যেতে পারে যা আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই এ ধরনের কাজ থেকে তুমি যেমন বিরত থাকবে, তোমার বন্ধুদেরও বিরত রাখবে।
অনেক সময় কিশোর-কিশোরী বিশেষ করে মেয়েদরকে রাস্তাঘাটে, বাসে বা অন্যান্য স্থানে ছেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম অশোভন ও অস্বস্তিকর আচরণ, কথাবার্তা, মন্তব্য কিংবা শারীরিক স্পর্শের সম্মুখীন হতে হয়। একে যৌন নিপীড়ন বলে। যৌন নিপীড়ন অনেকভাবেই হতে পারে। আজকাল তথ্য প্রযুক্তি যেমন- মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউব ইত্যাদি অপব্যবহার করেও অনেককে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন করা হয়।
নারী-পুরুষ যে কেউ যেকোনো সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারে। তবে শিশু, কম বয়সি মেয়ে বা ছেলে এই অবস্থার মুখোমুখি হয় বেশি। দেখা গেছে পরিচিত লোকজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনেরাই যৌন নিপীড়ন করে থাকে। সাধারণত যৌন নিপীড়নকারীরা শিশু বা কম বয়সি ছেলেমেয়েদের ভয়, প্রলোভন, চাপ বা হুমকি দেয় এ ধরনের ঘটনা কাউকে না বলার জন্য। কিন্তু এ রকম হলে চুপচাপ না থেকে বা ভয় না পেয়ে অভিভাবক বা বড় কাউকে বলা উচিত এবং সেই সাথে সমবয়সি ও পরিচিতদেরও তার সম্বন্ধে বলে দেয়া উচিত যেন তারাও তার সম্বন্ধে সাবধান থাকতে পারে। মনে রাখবে যে যৌন নিপীড়ন করে সে-ই দোষী, যাকে করা হয় তার কোনো দোষ নেই।
যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একা একা কারো সাথে মেলামেশা না করে বা বেড়াতে না গিয়ে কয়েকজন মিলে যাওয়া উচিত। এছাড়া যৌন নিপীড়ন করে এমন কারো সম্বন্ধে জানা থাকলে বা সে রকম সন্দেহ থাকলে তার সাথে একা গল্প করবে না, বা বেড়াতে যাবে না।
অনেক সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে বা ছেলে মানসিকভাবে কষ্ট পায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এ রকম ঘটনার শিকার হয় তবে এ অবস্থায় তাকে সান্ত¦না দেবে, সমবেদনা জানাবে যেন সে এ অবস্থা থেকে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সব সময় মনে রাখবে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন একটি ঘৃণ্য অপরাধ, যে যৌন নিপীড়ন করে সে-ই দোষী, তার সম্বন্ধে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন হয়ে চলতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সকল ধরনের যৌন নিপীড়নকারীদের জন্য দেশের প্রচলিত আইনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার ছেলেটি বা মেয়েটির দোষ নেই।
 আগ বাড়িয়ে কেউ বেশি আপনভাব দেখালে, সাহায্য বা উপকার করতে আসলে ভেবে-চিন্তে তা গ্রহণ করবে  কাউকে ভালো লাগলে চট করে তার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলবে না  অচেনা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা করবে না  কারো আচরণ বা কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হলে তার সামনে কখনো একা যাবে না বা থাকবে না  বিপরীত লিঙ্গের সমবয়সি, বয়স্ক আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে, বিশেষ করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে সাবধানে থাকবে  একা একা চলাফেরা না করে যতদূর সম্ভব দল বেঁধে চলাফেরা করবে  কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করবে। কেউ যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ করলে বা এ অবস্থার মুখোমুখি হলে চুপচাপ না থেকে অভিভাবককে জানাবে  পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যৌন নিপীড়নকারীর কথা জানিয়ে দেবে যাতে সবাই তার কাছ থেকে সাবধানে থাকে।
তোমাদের মতো অনেক মেয়েদেরই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ধরনের আচরণ হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। যে কোনো ধরনের আচরণ, কথা বা শারীরিক ছোঁয়া- তা যার দ্বারাই হোক না কেন, যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা যেতে পারে। এ ধরনের যৌন নিপীড়ন যেকোনো জায়গায় যেমন- রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে এমন কি বাসায়ও হতে পারে। নৈতিকতাহীন অনেক শিক্ষিত মানুষও এ ধরনের নিপীড়ন করতে পারে। অনেক সময় নিকট আত্মীয় বা আপনজনও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। অল্পবয়সি মেয়েরা এবং ছোট ছেলেরা যৌন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায় যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনো মতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। যৌন নিপীড়ন আইনত দ-নীয় অপরাধ। এই অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হলে কি করবে • তাকে জানিয়ে দাও যে, তুমি এসব পছন্দ করো না এবং ব্যাপারটি অন্য কাউকে বলে দেবে • তোমার বড় ভাই-বোন বা বাবা-মাকে এ সম্পর্কে জানাও • ঐ মানুষটির সাথে আর কখনো একা হবে না • সে অন্য কাউকে বলে দেবে বলে ভয় দেখালেও তার কথায় বিশ্বাস করবে না • এ ব্যাপারে নিজেকে কখনো দোষী ভাববে না।
এ বয়সে ছেলেরা মেয়েদের সাথে গল্প করতে চাইতেই পারে। একইভাবে মেয়েরাও ছেলেদের সাথে কথা বলতে চাইতে পারে। কথা বলা বা গল্প করার মধ্যে কোনো দোষ নেই। এতে কারো ভালো লাগে বা আবার কারো ভয়ও লাগতে পারে। তবে সাধারণত এতে ভয়ের কিছু নেই। এ রকম হলে মা-বাবা এর পরিণাম ভেবে রাগ করতে পারেন, লোকজন খারাপ বলতে পারে, আবার কোনো কোনো সময় সংযত না থাকলে আরো কিছু ঘটতে পারে। যখন ছেলে-মেয়েদের এমন সম্পর্ক বেশি দূর গড়ায়, আর অবাধ মেলামেশার দিকে এগুতে থাকে তখন সময়মতো নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই ভালো। মনে রাখা দরকার, কৈশোর হলো জীবন গড়ার শ্রেষ্ঠ সময়।
বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন মানসিক অনুভূতির মতো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এই বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে তোমার কাউকে ভালো লাগতেই পারে। তবে এ ধরনের ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে তোমাদের মতো ছেলে-মেয়েদের বেশি চিন্তাভাবনা না করাই ভালো। কারণ সব ভালো লাগা তোমাদের জন্য ভালো নাও হতে পারে। ভালো লাগার এই বিষয়টিকে যদি তোমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় বা মানসিক চাপের কারণ হয় তবে তুমি অবশ্যই তোমার মা-বাবাকে বলতে দ্বিধা করো না। আর বাবা-মাকে বলতে না পারলে পরিবারের নির্ভরযোগ্য কোনো সদস্য যেমন- বড়বোন, ভাবি বা দাদীকে তোমার মনের অবস্থা জানাতে পারো। এতে দ্বিধা করার কিছু নেই। তোমাদের মনে রাখা উচিত যে, বাবা-মা সবসময় তার সন্তানের ভালো চান। সঠিকভাবে বোঝালে তারা তোমাদের অবশ্যই বুঝবেন। আর এই বিশ্বাস থেকে যেকোনো সমস্যায় সবার আগে বাবা-মা ও পরিবারের সাথে আলোচনা করাই ভালো।
টিটকারি দেওয়া মোটেও ভালো কাজ নয়। অনেক সময় কিছু কিছু ছেলে বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে মেয়েদের টিটকারি দেয়। তবে টিটকারি দেয়া কোনো আনন্দের বিষয় নয়। এ ধরনের টিটকারি দেয়া মেয়েদের প্রতি ছেলেদের হেয় মনোভাবের প্রকাশ। যারা টিটকারি দেয় তাদের বোঝা দরকার যে, কাউকে বিরক্ত করা বা অপমান করা মোটেও উচিত নয়। টিটকারি দেয়ার কারণে অনেক মেয়ে মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে। টিটকারি দেয়া বা উত্ত্যক্ত করা যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মেয়েদের টিটকারি দেয়া বা উত্ত্যক্ত করা এক ধরনের যৌন হয়রানি এবং আমাদের দেশে এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। রাস্তাঘাটে কেউ টিটকারি দিলে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে বাড়ি ফিরে ব্যাপারটি অবশ্যই বাবা-মাকে জানানো প্রয়োজন। একা পথ চললে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই স্কুল থেকে ফেরার পথে কয়েকজন মিলে একসাথে চলা ভালো। এ রকম ঘটনা ঘটলে ভয় পাবার কিছু নেই।
রাস্তায়, স্কুলের সামনে, বাসে বা অন্য কোথাও মেয়েদেরকে খেপানো বা বিরক্ত করা অপরাধ। একে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি বলা হয়। যৌন হয়রানি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের আচরণ মেয়েদের কখনো ভালো লাগে না, বরং এতে তারা অস্বস্তি ও অপমানিত বোধ করে। একইভাবে মেয়েরাও কখনও কখনও ছেলেদের বিরক্ত করে থাকে। ছেলে হোক, মেয়ে হোক এ ধরনের আচরণ করা কারো উচিত নয়। একে অপরের প্রতি সম্মান দেখানোই সাধারণ ভদ্রতা।
সাধারণত মা-বাবারা তাদের ছেলে-মেয়েদের কল্যাণের ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন এবং তাদের মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন তার ভালো করে শিক্ষা অর্জন। এ বয়সে তোমাদের জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কম থাকে বলে অনেকেই নিজেদের ভালোমন্দ বুঝতে পারো না। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বাইরে মেলামেশা বা হৈ চৈ করতে গিয়ে কোনো ভুল হতে পারে বা তোমরা বিপদে পড়তে পারো, এমনকি বন্ধুরাও বাইরে বেড়ানোর কথা বলে বিপদে ফেলতে পারে এবং এ রকম কিছু হলে তারা হয়তো তোমাদের সাহায্য করতে পারবেন না। তাই তারা চান তোমরা লেখাপড়ায় ব্যস্ত সময় কাটাও- যাতে বাড়তি সময় পেয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে জড়িয়ে বিপদে না পড়ো।
কিছু কিছু পুরুষের বিকৃত মানসিকতার কারণে আমাদের দেশে অনেক মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক সময় এ ধরনের নির্যাতন বা বিকৃত মানসিকতা নিজের পরিবার বা খুব কাছের পুরুষদেরও থাকতে পারে। এই মানুষ পরিবারের মেয়েদেরও নির্যাতন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে বিকৃত রুচির মানুষের কাছে কোনো মেয়েই নিরাপদ নয়। এই পুরুষটি যেই হোক না কেন তার এই ধরনের আচরণের বিষয়টি মা-বাবা বা পরিবারের অন্য নির্ভরযোগ্য অভিভাবককে জানাতে হবে এবং এর কঠিন প্রতিবাদ করতে হবে।
অনেক মেয়েদের এমনকি ছেলেদেরও শিক্ষিত আত্মীয়রা খারাপ উদ্দেশ্যে বিরক্ত করে থাকে। এ রকম আচরণ যেমন- গায়ে হাত দেয়া হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। এ ধরনের যৌন নিপীড়ন যেকোনো জায়গায় যেমন - রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে বা বাসায়ও হতে পারে। অনেক সময় নিকট আপনজন যারা বাহ্যিকভাবে ভদ্র ও শিক্ষিত তারাও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। অল্পবয়সি মেয়েরা বা ছেলেরা এমন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায়, যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু‘ এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনোমতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় সে নিজে দোষী নয়। যে এটা করে সে-ই দোষী।
যৌন নিপীড়ন একটি গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমাজের প্রতিটি মানুষ সচেতন হলে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিবারের এবং স্কুল-কলেজের মাধ্যমে যৌন হয়রানির খারাপ দিকগুলো জানাতে ও শেখাতে হবে। নারীদের সম্মান দেবার শিক্ষা ছোটবেলায় তার পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই একটি ছেলেকে গ্রহণ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যৌন নির্যাতন বন্ধের জন্য মেয়েদেরও নিজেদের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার যাতে না হতে হয় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে এবং চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো মেয়ে যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হলে যৌন নিপীড়নকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।