নারীর মানবাধিকার

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ঘোষিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নারীরা একজন মানুষ হিসেবে তাদের জন্য প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরুষের মতো সমভাবে ভোগ করতে পারে না। কমবেশি প্রায় প্রতিটি দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, প্রথা ও ঐতিহ্য ও আইন-কানুন চূড়ান্ত বিচারে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক হওয়ায় তা তাদের মানবাধিকারকে সংকুচিত করেছে। স্বাভাবিক কারণে তাই নারীরা সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার হরণের শিকার।

নারীর মানবাধিকার সুরক্ষা কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং তা মানুষ হিসেবে তাদের অন্যতম ন্যায্য অধিকার। নারীর মানবাধিকার হচ্ছে ন্যায় বিচারের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই খাদ্য, শিক্ষা, আশ্রয়, সম্পদ, সম্পত্তি, যৌনতা ও পছন্দ-অপছন্দ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রাজনীতি-অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার এবং সকল প্রকার নির্যাতন থেকে মুক্তি সব কিছুতেই নারীর সমান অধিকার। এগুলো হলো নারীর মানুষ হিসেবে জন্মগত ও সহজাত অধিকার। কিন্তু প্রচলিত মানবাধিকার ঘোষণা ও কর্মকাঠামো নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নয়। নারীর মানবাধিকার সংরক্ষণে প্রয়োজন আরও বাড়তি উদ্যোগ। একজন পরিপূর্ণ মানুষ রূপে প্রাপ্য সকল অধিকার উপভোগের জন্য নারীকে সক্ষম করে তুলতে বিশেষ মনোযোগ ও হস্তক্ষেপ আবশ্যক। নারীর মানবাধিকারকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা জরুরি।

নারীর মানবাধিকার সংক্রান্ত মূল আর্ন্তজাতিক পদক্ষেপ সমূহ

  • ১৯৪৫: নারী পুরুষের মধ্যে সমতার নীতিমালা সংযুক্ত করে জাতিসংঘ সনদ গৃহিত
  • ১৯৪৬: নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রসারের উদ্দেশ্যে নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন (CEDAW) গঠন ।
  • ১৯৪৮: সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা গৃহিত ।
  • ১৯৪৯: মানুষ পাচার ও যৌন ব্যবসার মাধ্যমে শোষণ অবসানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদ অনুমোদন ।
  • ১৯৫১: আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা অনুযায়ী নারী ও পুরুষের সমান কাজের সমান মজুরি সনদ অনুমোদন ।
  • ১৯৫২: নারীর রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ গ্রহণ ।
  • ১৯৫৭: বিবাহিত নারীর জাতীয়তা সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ অনুমোদন ।
  • ১৯৬০: শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ সংক্রান্ত সনদ অনুমোদন ।
  • ১৯৬৬: জাতিসংঘ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত সনদ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত সনদ গৃহিত ।
  • ১৯৬৭: নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত ঘোষণা অনুমোদন ।
  • ১৯৬৮: তেহরানে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্মেলনের ঘোষণায় নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর করার আহবান ।
  • ১৯৭৪: জরুরি অবস্থা ও যুদ্ধ অঞ্চলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ও তাদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত ঘোষণা গ্রহণ ।
  • ১৯৭৫: আর্ন্তজাতিক নারীবর্ষ পালন এবং প্রথম বিশ্বনারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত ।

সূত্রঃ স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন সমূহ

১। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০।
২। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৩ ( খসড়া )।
৩। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০।
৪। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৩।
৫। ডি এন এ আইন ২০১৪।