এইচ আই ভি ও এইডস প্রতিরোধ

এইডস প্রতিরোধ

  • নিরাপদ যৌন অভ্যাস তৈরি করা
  • এইডস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনে বিরত থাকা
  • জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ও সূচ ব্যবহার করা
  • রক্ত গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা
  • ধর্মীয় অনুশাসনে জীবনযাপন করা
  • বহুগামিতা পরিহার করা
  • প্রতিবার যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করার মাধ্যমে এইডস থেকে দূরে থাকা যায়

মনে রাখতে হবে - এইডসের যেহেতু কোনো চিকিৎসা নেই তাই এর প্রতিরোধই হচ্ছে সর্বোত্তম প্রতিকার । অতত্রব, নিরাপদ যৌন অভ্যাস তৈরি করে, বহুগামিতা পরিহার করে, ধর্মীয় অনুশাসনে দাম্পত্য জীবনযাপন করে এবং গ্রহণ ও প্রদানকালে সতর্কতা অবলম্বন করাই এইডস থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় । এইসআইভি/এআইডিএস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না । মানুষ হিসাবে তার সব অধিকার নিশ্চিত করা সকলের সামাজিক কর্তব্য ।

এইচআইভি ও এইডস সংক্রান্ত ভুল ধারণা

সারা বিশ্বে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে অনেক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।

  • যৌনমিলনের পর যৌনাঙ্গ পরিস্কার করে ধুয়ে ফেললে এইচআইভি সংক্রমিত হয় না।
  • হাঁচি, কাশির মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায়।
  • একত্রে খাবার খেলে ও একই পুকুরে গোসল করলে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে।

বৈষম্য ও অপবাদ

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অপবাদ দূর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে এইচআইভি ও এইডস বিষয়ে মানুষের সকল ধরনের ভুল ধারণা দূর করা দরকার । আর এই কাজটি পরিবার থেকে শুরু হতে পারে ।

অনেকেই মনে করেন বিবাহ বহির্ভূত কিংবা যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে এবং মাদকসেবীরাই শুধুমাত্র এইচআইভি সংক্রমিত হয়। এ ধরনের কাজকে নৈতিকতা বিরোধী হিসাবে গণ্য করে কেউ কেউ এদেরকে শাস্তি দেয়ার কথা ভাবেন। এ কারণে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি অবজ্ঞা দেখানো হয়, তাকে অপবাদ দেয়া হয়, তার প্রতি বৈষম্য দেখানো হয় এবং তাকে অবহেলা করা হয়। এমনকি অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় । যেমন: তার সঙ্গে ভালো আচরণ না করা, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা, শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ না দেয়া ইত্যাদি। ফলে,

  • এইচআইভি/এইডস রোগী প্রয়োজনীয় মানসিক সেবা ও শুশ্রুষা থেকে বঞ্চিত হয় ।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অবস্থা নিয়ে ভীত থাকেন এবং রোগের কথা গোপন করেন।
  • এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যহত হয়।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধরনের বৈষম্য ও অপবাদ দূর করা গুরুত্বপূর্ণ ।

এইচআইভি আক্রান্তের সেবা যত্ন

এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণ মানুষের মতোই সম্মান, মর্যাদা ও সেবা পাওয়ার অধিকার আছে । অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের চার ধরনের সহায়তা দরকার । এগুলো হলো:

  • চিকিৎসা চাহিদা যেমন চিকিৎসার জন্য তথ্য ও চিকিৎসা সেবা
  • মানসিক চাহিদা যেমন শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা
  • আর্থসামাজিক চাহিদা যেমন আয় করার সুযোগ পাওয়া, বাসাবাড়িতে সহায়তা, এতিমদের সহায়তা
  • মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা চাহিদা যেমন হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার, শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, অপবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পাওয়া

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির চাহিদাগুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শুরুতে পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই যত্ন নিতে পারলেও একটা সময়ে ডাক্তার ও নার্সের সাহায্যের দরকার হয়। একজন গুরুতর অসুস্থ মানুষের যিনি সেবা করেন তার নিজেরও সেবার দরকার হয়। তাই পারিবারিক ও সামাজিক সেবাযত্ন ও প্রতিরোধ কার্যক্রম এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায়্য করে। ফলে এইচআইভি নিয়ে ভুল ধারণা এবং এইচআইভি আক্রান্তের প্রতি বৈষম্য ও অপবাদ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের ভূমিকা

পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ যুবসমাজকে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সঠিক ও পরিপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন । এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা যে ভূমিকা রাখতে পারেন তার মধ্যে রয়েছে:

  • এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বিভিন্ন বিষয়ে সন্তানদের খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা
  • জীবনভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল করে গড়ে তোলা ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া
  • সকল ধরনের নেশা বিশেষ করে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত রাখা এবং নেশাগ্রস্ত হয়ে পরলে সেখানে থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা ও পুনর্বাসিত করা।
  • স্ব-স্ব ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও আদেশ মেনে চলার পরামর্শ দেয়া
  • পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত এইচআইভি ও এইডস বিষয় ও এ সংক্রান্ত বইপত্র/পুস্তিকা সংগ্রহ করে পড়তে উৎসাহিত করা এবং আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া
  • যুবসমাজের উপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা ।

এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ থেকে বাঁচার উপায়

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধের জন্যে যৌনরোগ সর্ম্পকে জানা দরকার। সাধারণত কনডম ছাড়া যৌনমিলনের মাধ্যমে যৌনরোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। এই জীবাণুগুলো সন্তান জম্ম দেয়ার সঙ্গে শরীরের যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যুক্ত সেগুলোকে আক্রান্ত করে। এসব যৌনরোগ হলো গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, জেনিটাল হারপিস এইচআইভি ইত্যাদি । যৌনরোগের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্নক ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন । তার অনেক ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে । তাই সঠিক নিয়মে যৌনরোগের চিকিৎসা করতে হবে । এইচআইভি ও যৌনরোগ থেকে বাঁচার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে ।

স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য নারী বা পুরুষের সাথে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা । প্রয়োজনে প্রতিবার যৌনমিলনের সময় সঠিক নিয়মে কনডম ব্যবহার করা।