কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন

যখন একটি মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয় । যেমন- উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয়, বগলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায় । কোমর সরু হয়, উরু ও নিতম্ব ভারি হয়, জরায়ু ও ডিম্বাশয় বড় হয়। এই পরিবর্তনগুলোই হচ্ছে মেয়েদের বড় হওয়ার লক্ষণ । মাসিক একটি মেয়ের শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ১০-১৩ বছর বয়সে শুরু হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মে ৪৫-৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত চলে । তবে কারও ১০ বছর বয়স থেকেও মাসিক স্রাব শুরু হতে পারে । মাসিক স্রাব শুরু হওয়ার প্রথম বছরগুলোতে কিছুটা অনিয়ম হতে পারে এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

মাসিক বা ঋতুস্র্রাব

মাসিক বা ঋতুস্রাব মেয়েদের দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার লক্ষণ । সাধারণত ১০-১৩ বছর বয়সে যে কোনো সময় মাসিক শুরু হয় এবং ৪৫-৪৯ বছর বয়সে স্বাভাবিক নিয়মেই মাসিক বন্ধ হয়ে যায় । স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিমাসেই মাসিক হয়ে থাকে এবং তা ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয় । মেয়েদের প্রতি ২৪ থেকে ৩২ দিন অর্থাৎ গড়ে ২৮ দিন পর পর মাসিক হয় । একে মাসিকচক্র বলে । কারো কারো ক্ষেত্রে এ ২৮ দিনের চক্রটি কম বা বেশি হতে পারে । মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকেই মাসিকচক্র শুরু হয় । মাসিকের প্রথম দিন থেকেই ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হতে শুরু করে । মাসিক হওয়ার পরে মেয়েরা প্রজননক্ষম অর্থাৎ সন্তান ধারণের ক্ষমতা লাভ করে । মাসিক নিয়ে ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই ।

মাসিক কেন হয়

মেয়েরা যখন বড় হয় তখন প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু বের হয়ে ডিম্ববাহী নালীতে আসে । একই সময় জরায়ুতে রক্তে ভরা নরম পর্দা তৈরি হয়। এই রক্তে ভরা পর্দা ডিম্বাণুসহ মাসিক হিসেবে যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে । কোনো আঘাত বা অসুখের কারণে এই রক্ত পড়ে না । এ বয়সে একটি মেয়ে যে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা লাভ করেছে, মাসিক তারই প্রমাণ ।

মাসিকচক্র ব্যবস্থাপনা

মাসিকের সময়ে রক্ত যাতে বাইরে গড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড, পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে হয় । এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে কয়েকবার বদলাতে হয় । এছাড়া নানা মাপের প্যান্টি পাওয়া যায় । এসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে হবে । পরিচ্ছন্ন শুকনা কাপড় পরতে হবে, তা না হলে একই কাপড় যদি বারবার ব্যবহার করা হয় তবে সেগুলো সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে/বাতাসে শুকাতে হবে । মাসিক চলাকালীন সময়ে নিয়মিত গোসল করতে হবে, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরতে হবে, পুষ্টিকর সব ধরনের খাবার খেতে হবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।

মাসিকের সময় বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে । তা না হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। লেবু, কমলা, তেঁতুল, আমলকি, জলপাই ইত্যাদি টক জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরে আয়রন-এর শ্বসন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় । কোনো খাবারই মাসিকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না । কৈশর বয়স শরীর গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় । আর শরীর গঠনে সাহায্য করে পরিমাণমত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার । সুতরাং এ বয়সে বিশেষ করে মাসিকের কারণে কোনো খাবার বেছে খাওয়া বা বাদ দেয়া উচিত নয় ।

মাসিকের সময় কারো কারো কোমরে বা পেটে অল্প অল্প ব্যথা হতে পারে । শরীরের এক বিশেষ হরমোনের জন্য মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচন (ছোট হওয়া) ও প্রসারণ (বড় হওয়া) ঘটে । ফলে তলপেটে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হয় । তাছাড়া প্রথম প্রথম মাসিক হলে মেয়েরা অস্বস্তিতে ভুগতে পারে । এ সময় বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম বা গরম সেক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । তবে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা হলে, বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।

কীভাবে গর্ভধারণ ঘটে

একটি মেয়ের মাসিক শুরু হয় ১২-১৩ বছর বয়সে এবং মাসিক শুরু হবার পর থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। এই ডিম্বাণু সাধারণত দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের থলি থেকে ডিম্ববাহী নালীতে আসে । এই সময়ে যদি যৌনমিলন হয়, তাহলে পুরুষের শুক্রাণু যোনিপথ দিয়ে ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছায় । সেখানে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হবার ফলে ভ্রুণ তৈরি হয় । একে গর্ভধারণ বলে । এই ভ্রুণ কয়েক দিন পর জরায়ুতে এসে পৌঁছে এবং সেখানে বড় হয়ে শিশুতে পরিণত হয় । এ সময় শিশুটি একটি গর্ভফুলের (ফুল) মাধ্যমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে এবং গর্ভফুলের মধ্য দিয়ে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়। সাধারণত ৯ মাস ৭ দিন এভাবে মায়ের জরায়ুতে কাটানোর পর মায়ের প্রসব ব্যথা ওঠে এবং শিশু যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে । একেই প্রসব বা ডেলিভারি বলে । কখনো কখনো সমস্যা থাকলে পেট কেটে বা অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয় ।


২০ বছর বয়সের আগে শরীরের বৃদ্ধি পুরোপুরি না হওয়ার কারণে মেয়েদের গর্ভবতী /সন্তান ধারণ করা উচিত নয় ।