গবেষণা

প্রজনন স্বাস্থ্যে সচেতন হচ্ছে নারী

পোস্ট করেছেন : অ্যাডমিন
পোস্ট করার সময় : জুলাই ২১, ২০১৬, ১১:০০ এ এম

সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে সামগ্রিকভাবে শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক কল্যাণের সমন্বয়ে সন্তান জন্মদানের পরিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৫-২৪ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী হচ্ছে প্রজননক্ষম অংশ। তবে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে এসব নারীই বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। বাংলাদেশের মাত্র ১৩ শতাংশ নারী প্রসবকালে দক্ষ ধাত্রীর সেবা পান। জরিপে দেখা গেছে, শিশু জন্মদানের সময় প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হয়। প্রসবকালীন জটিলতায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একজন মায়ের মৃত্যু হয়। আর এই মৃত্যুর মূল কারণ প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্যে দিন দিন সচেতন হচ্ছেন নারীরা। বারডেম হাসপাতালের গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. শামসাদ জাহান শেলী বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারী প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গর্ভপাত, জরায়ুর মুখে আঘাত, জরায়ু ও প্রজননপথের মুখ ফেটে যাওয়া প্রভৃতি। তবে বর্তমানে নারীরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গর্ভবতী নারীরাও এখন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনেক বেশি সচেতন।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘মনিটরিং দি সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ-২০১৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি নারীদের জাতীয়ভাবে ২০১৩ সালে প্রজনন হার ছিল ২.১১ শতাংশ, যা ২০১২-তে ছিল ২.১২ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ২.১১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ২.১৫ শতাংশ। শহরের নারীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এতদিন তা ছিল গর্ভকালীন সচেতনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এখন শহরের নারীরা জরায়ু ক্যানসার, ফিস্টুলাসহ জরায়ু ও প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অসুখের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। সচেতনতার হার অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে গ্রামীণ নারীদের মধ্যেও। গ্রামীণ নারীরা এখন গর্ভকালীন পরিচর্যা থেকে প্রজননতন্ত্রের নানা অসুখ লোকলজ্জায় লুকিয়ে না রেখে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে নারীপ্রতি গড় সন্তান সংখ্যা ২.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিডিএইচএস ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬২ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে যা ছিল ৪৯ শতাংশ। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে সচেতন করে তুললে ও সেবা দিতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং সেবা পরিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নগরের নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। বর্তমানে ৭৭% নারী প্রসবোত্তর সেবা নিচ্ছেন। পরিবার পরিকল্পনায় ৭০% চাহিদার বিপরীতে ৪২ শতাংশ কিশোরী ও ৫২ শতাংশ তরুণী বর্তমানে কোনো না কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। মূলত নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রচার, পরামর্শ, স্বল্পমূল্য ও বিনামূল্যে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার কারণেই নারীরা এখন প্রজনন স্বাস্থ্যে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে প্রত্যন্ত হাওর এলাকায় সিএইচডব্লিউ কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ জন ধাত্রী নিরাপদ প্রসবে গ্রামীণ নারীদের সেবা দিচ্ছে। এই প্রকল্পের ফলে হাওর এলাকার প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য সহজলভ্য হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের প্রায় ১৪ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। বর্তমানে গর্ভবতী সেবা, প্রসব সেবা, এমআরএ সেবা, যৌনবাহিত রোগের সেবাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে সদর ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে নারীরা পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শ, খাবার বড়ি, জন্মনিরোধক ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট, ভ্যাসেকটমি, লাইগেশনসহ পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন উপকরণ স্বল্পমূল্যে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা পাচ্ছে কিশোরী-নারীরা। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের গ্রামীণ নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ ও সচেতনতা উন্নয়নশীল বিশ্বে এখন রোল মডেল হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

নতুন থ্রেড তৈরি করুন
আপনার মন্তব্য পাঠান :

দাখিল করুন