সিফিলিস

ট্রেপোনেমা পেলিডাম (Treponema pahdum) নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। যৌন মিলনের সময় এ জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের উপসর্গ সুপ্তকাল ৯-৯০ দিন । তবে সাধারণত ১৪ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়।

১.প্রাথমিক পর্যায়:

এই স্তর সবচেয়ে ছোঁয়াচে। যৌনাঙ্গে এক বা একাধিক ব্যথাহীন মাঝারি আকৃতি ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং আশেপাশের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যায় কিন্তু ব্যথা থাকে না। গর্ভবতী আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত,অকাল প্রসব বা মৃত প্রসব হতে পারে।

২. মাধ্যমিক পর্যায়:

প্রাথমিক পর্যায়ে সৃষ্ট ক্ষত ভালো হয়ে যায়। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের লক্ষণ যেমন গা ম্যাজ ম্যাজ করা, জ্বর ভাব,মাথাব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই পর্যায়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে । যেমন-

  • চামড়ায় বিশেষ ধরনের গোটা হওয়া যা চুলকায় না
  • লসিকা গ্রন্থিসমূহ ফুলে যাওয়া
  • শরীরের উষ্ণ এবং ভেজা স্থানে যেমন পায়ুপথে ঝিল্লিতে বিশেষ ধরনের গোটা বা ক্ষত হতে পারে

৩. বিলম্বিত পর্যায়:

দশ বা ততোধিক বছর পরে চামড়া বা চামড়ার ঝিল্লির নিচে বিশেষ ধরনের গুটি হয় যাকে গামা বলে । সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে দীঘদিন পরে এই রোগ হৃদযন্ত্র ও মস্তিস্ক আক্রান্ত হওয়ার ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে ।

জম্মগত সিফিলিস

মায়ের সিফিলিস থাকলে জন্মের সময় শিশু সিফিলিস নিয়ে জন্মাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জন্মের পূর্বেই শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে অথবা জন্মের পরে। জন্মগত সিফিলিসে শিশুর অস্থি এবং অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হওয়ার ফলে শিশুর চলাফেরা বাধাগ্রস্থ হতে পারে। শিশুর বৃক্ক যকৃত জন্মগত সিফিলিসে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সিফিলিস হয়েছে কিনা তা কীভাবে জানা যাবে

রোগের লক্ষণ দেখে অনেক সময়ই রোগ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় না। কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে সিফিলিস আছে কিনা সে সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়।

চিকিৎসা

সিফিলিসের উপরোক্ত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথোপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন যে তার সিফিলিস হয়েছে তাহলে দেরি না করে স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। সিফিলিসে আক্রান্ত লোকের সাথে যৌন মিলন হয়েছে এ কথা জানার সাথে সাথেই চিকিৎসা করতে হবে । স্বামী-স্ত্রী যারই সিফিলিস হোক না কেন দু’জনেরই চিকিৎসা নেয়া বাধ্যতামুলক।

প্রতিরোধ

  • যৌনাচারে সংযম আচরণ করে, বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করা।
  • যৌন মিলনে বিশ্বস্ত সঙ্গী বেছে নিয়ে এবং যথোপযুক্ত প্রতিরোধসহ যৌনমিলনে অংশ নেয়া।
  • বহুগামিতা পরিহার করা।
  • পতিতাদের সামাজিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুস্থ এবং স্বাভাবিক বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
  • প্রতিবার যৌনমিলনের সময় সঠিক উপায়ে কনডম ব্যবহার করা।