গর্ভপাত

পেটের ভিতরে বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেলে মায়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে। এসকল ক্ষতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ক) অতিরিক্ত রক্তপাত খ) ইনফেকশন ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব গ) প্রচন্ড পেটে ব্যথা ঘ) প্রচন্ড জ্বর ঙ) রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের (রক্ত যাওয়ার) সম্ভাবনা চ) সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করালে মায়ের স্বাস্থ্যহানি থেকে শুরু করে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
একবার বাচ্চা নষ্ট হলে আর বাচ্চা হবে না এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পেটের বাচ্চা কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে পরবর্তীতে আবার বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। তবে একবার বাচ্চা নষ্ট হলে পরের গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কেননা যার একবার গর্ভপাত হয় তার বার বার গর্ভপাতের আশংকা থেকে যায়। আবার অনেক সময় আংশিক গর্ভপাত হলে D&C (Dilation & Curettage) করে জরায়ুর ভিতর পরিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে নিকটস্থ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, অনভিজ্ঞ কারো দ্বারা D & C করালে জরায়ুর ভিতরের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পরবর্তীতে আর গর্ভধারণ নাও হতে পারে। এ ছাড়া এক্ষেত্রে জরায়ুর সংক্রমণেরও আশঙ্কা থাকে।
গর্ভপাত বা বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো- ক) মায়ের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, আয়োডিন ঘাটতি খ) বাল্যবিবাহ ও কম বয়সে সন্তান গ্রহণ গ) ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেয়া ঘ) গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ঙ) গর্ভকালীন সময় ভারি কাজ করা (যেমন: কাপড় ধোয়া, পানি ভরতি কলস কাঁখে নেয়া, ভারি বালতি বা হাঁড়ি তোলা)। চ) মায়ের শারীরিক রোগ/জটিলতা- যেমন-জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন, জরায়ুর টিউমার, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা, প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন ইত্যাদি। ছ) গর্ভের বাচ্চার ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার জন্যও গর্ভপাত হয়। আবার মায়ের সবকিছু ঠিক থাকলেও স্নায়ুবিক বৈকল্য (Hypothalamic inhibition) এবং অজানা কিছু কারণে বাচ্চা নষ্ট হতে পারে।
বারে বারে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হওয়ার কারণগুলো হলো- ১. জেনেটিক বা বংশাণুক্রমিক সমস্যা- বাবা বা মায়ের যেকোনো একজনের বা উভয়ের ক্রটিপূর্ণ জিন (বাচ্চার বৈশিষ্ট্য ধারণকারী) শরীরে আসলে বাচ্চার ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যার কারণে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ২. জরায়ুর (বাচ্চা ধারণের থলি) গঠনজনিত সমস্যা। ৩. মায়ের শারীরিক রোগ/জটিলতা- যেমন-জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন, জরায়ুর টিউমার, ডায়বেটিস, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা, প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন ইত্যাদি।
বেশি জোরে হাঁটলে বা কোনো প্রকার ভ্রমণ করলেই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে এমন নয়, তবে পেটে বাচ্চা আসার পর বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়। এই সময় ভারি কাজ করার ফলে বা বেশি দৌড়াদোড়ি বা ভ্রমণের ফলে গর্ভের ফুল জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যাবার ভয় থাকে। এতে মায়ের রক্তস্রাব শুরু হয়ে যেতে পারে। মায়ের এই রক্তস্রাব (যা সাধারণত পেটে বাচ্চা থাকার সময় হওয়ার কথা নয়) গর্ভপাতের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভবতী মায়ের পেটে কোনো প্রকার আঘাত করলে পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। পেটে আঘাতের ফলে জরায়ুও আঘাত প্রাপ্ত হয়। এর ফলে জরায়ুতে সংকোচন (ছোট হওয়া) প্রসারণ (বড় হওয়া) শুরু হয় এবং মা পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। জরায়ুর অনবরত সংকোচন-প্রসারণের ফলে গর্ভের ফুল জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। এতে মায়ের রক্তস্রাব শুরু হয়ে যেতে পারে। মায়ের এই রক্তস্রাব (যা সাধারণত পেটে বাচ্চা থাকার সময় হওয়ার কথা নয়) গর্ভপাতের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। গর্ভপাতের ফলে বেশির ভাগ সময় বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবে প্রসবের মতো মাসিকের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। তবে সেটা কোনো কারণে না হলে তখন অপারেশন করে বের করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় শারীরিক মিলনের ফলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে এ কথা পুরোপুরি ঠিক নয়। খেয়াল রাখা উচিত মা যেন শারীরিক কোনো কষ্টের শিকার না হয় এবং শারীরিক মিলনের ফলে মায়ের যাতে কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) না হয়। কেননা সংক্রমণের ফলে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত জ্বর হওয়ার ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভবতী মায়ের জ্বর দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে কিছু কিছু ঔষধ খাওয়াও নিষেধ রয়েছে। কারণ ঐসব ঔষধ খাওয়ার ফলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া এসকল ঔষধ গর্ভপাতও ঘটাতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার ঔষধ খাওয়া উচিত নয়।