স্থায়ীপদ্ধতি

খোজা করা বা খাসী করা হলো অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেয়া। যেমন- গরুর অন্ডকোষ কেটে ফেলে দিয়ে বলদ বানানো হয়। অনেক আগে রাজা-বাদশাদের রাজপুরী পাহারা দেওয়ার জন্য খোজা সৈন্য রাখা হতো। অন্ডকোষ কেটে ফেলার জন্য তারা সহবাস করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত। হাদীসে “খোজা” করা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। কারণ খোজা করলে যৌনক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ভ্যাসেকটমিতে অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেয়া হয় না। অন্ডকোষ পুরুষ হরমোন আগের মত তৈরি করে থাকে, ফলে পুরুষ হরমোন শরীরে ঠিক থাকে। ফলে পুরুষালীভাব ঠিক থাকে এবং যৌনক্ষমতা নষ্ট হয় না। আগের মত সহবাস করা যায় এবং বীর্যপাতও আগের মতই হয়। বরং স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় যৌনক্ষমতা ও তৃপ্তি বৃদ্ধি পায়। ভ্যাসেকটমি করালে শুধুমাত্র সন্তান জন্মদান করা যায় না। কারণ বীর্যে শুক্রকীট থাকে না।
হ্যাঁ, বীর্যপাত আগের মতই হয়, বীর্যে শুধু শুক্রকীট থাকে না, তাই সন্তান হয় না। শুক্রকীট ও কিছু জলীয় পদার্থ নিয়ে বীর্য তৈরি হয়। শুক্রকীট তৈরি হয় অন্ডকোষে। জলীয় পদার্থ তৈরি হয় বীর্যথলি থেকে ৭০%, প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে ২৫% ও অন্ডকোষ থেকে ৫%, খুবই অল্প পরিমাণ বালবো-ইউরেথ্রাল গ্রন্থি থেকে। ভ্যাসেকটমি অপারেশনের পর বীর্যের পরিমাণ মাত্র ৫% কমে গেলেও ভ্যাসেকটমি করা কোন পুরুষ বুঝতে পারেন না এবং যৌন আনন্দের কোন হেরফের হয় না।
ভ্যাসেকটমি করলে যৌনক্ষমতা বা যৌনমিলনের ক্ষমতা কমে না; আগের মতই ঠিক থাকে। বরং সন্তান হবে এই চিন্তা না থাকায় যৌনমিলনের ক্ষমতা, ইচ্ছা ও তৃপ্তি আরো বেড়ে যায়। শুক্র ও ডিম্বের সংগে সন্তান জন্মদানের সম্পর্ক আছে, যৌনমিলনের আনন্দের সম্পর্ক নেই। সুতরাং এসব অপারেশন করা হলে ক্ষমতা বা আনন্দ কমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পুরুষের অন্ডকোষ থেকে পুরুষদের হরমোন ও মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে মহিলাদের হরমোন তৈরি হয়। ভ্যাসেকটমি এবং টিউবেকটমি অপারেশনে অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ে কিছু করা হয় না বলে পুরুষদের পুরুষালীভাব এবং মহিলাদের মেয়েলীভাব আগে মতই ঠিক থাকে। এই সকল অপারেশনে অন্ডকোষ ও ডিম্বাশয় আগের মত থাকে এবং আগের মতই হরমোন তৈরি করে থাকে। ফলে যৌন আনন্দ আগের মত থাকে।
শরীরের শক্তি নির্ভর করে প্রতিদিনের খাদ্যের উপর। সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করলে এবং রোগ না থাকলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং শক্তিও পাওয়া যায়। ভ্যাসেকটমি বা টিউবেকটমি করালে শরীরের পরিশ্রম করার ক্ষমতা কমে না; ভারী কাজ করতেও কোন অসুবিধা হয় না। টিউবেকটমি অপারেশন খুবই সামান্য পেট কাটা হয় (১ – ১.৫ ইঞ্চি), তাই ভারী কাজ করতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। পুরুষেরাও ভ্যাসেকটমি অপারেশনের পর ভারী কাজ আগের মতই করতে পারেন। ভারী কাজ করার সাথে এই অপারেশনের কোন সম্পর্ক নেই।
টিউবেকটমি অপারেশন করলে তলপেটে চাকা হয় না কিংবা ব্যথা করে না। এই ধরণের অসুখের সাথে টিউবেকটমির কোন সম্পর্ক নেই। টিউবেকটমি না করালেও অনেক মহিলার তলপেটে ব্যথা ও চাকা হতে পারে। যদি তলপেটে চাকা হয় বা ব্যথা করে তাহলে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
এটা একটা কুসংস্কার, বাচ্চা মারা যায় কোন দুর্ঘটনায় বা অসুখে। কিছু কাকতালীয় ঘটনার কারণে এরকম মনে করা হয়ে থাকে, এর সাথে ভ্যাসেকটমি বা টিউবেকটমি কোন সম্পর্ক নেই। উন্নত বিশ্বে ভ্যাসেকটমি ও টিউবেকটমি সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, কারণ তাদের ভেতর কুসংস্কার সবচেয়ে কম।
মাজা ব্যথা বা কোমর ব্যথার সাথে লাইগেশন না টিউবেকটমি অপারশনের কোন সম্পর্ক নেই। অতিরক্ত পরিশ্রম করলে মাজা ব্যথা করে, বয়স বেশি হলেও মাজা ব্যথা হতে পারে। যদি অতিরিক্ত ব্যথা করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রত্যেক দম্পত্তি তাদের নিজেদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি কোনটি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। যার আর সন্তান চান না তাদের জন্য দুটি পদ্ধতিই কার্যকরী, নিরাপদ ও স্থায়ী পদ্ধতি।
পুনঃসংযোজন অপারেশন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় তবে এই অপারেশন খুবই জটিল, ব্যয়বহুল এবং সবসময় কার্যকর ও সহজপ্রাপ্য হয় না। যারা আরও সন্তান চান তাদের অন্য পদ্ধতি বেছে নেয়া উচিৎ। টিউবেকটমি বা ভ্যাসেকটমি অপারেশন করার পর কোন কারণে সকল সন্তান মারা গেলে এবং সন্তান হওয়ার বয়স থাকলে এই অপারেশন করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা/ মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) এর সাথে যোগাযোগ করে ‘পুনঃসংযোজন অপারেশন’ করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এই সকল অপারেশনে সফলতার হার খুবই কম; যত দেরীতে এই অপারেশন হবে সাফল্যের হার ততই কমে যাবে।
হ্যাঁ, বীর্যরস পরীক্ষা করে তার মধ্যে শুক্রকীট আছে কি-না দেখা যায়। যদি শুক্রকীট পাওয়া না যায় তবে বুঝতে হবে ভ্যাসেকটমি সঠিকভাবে কাজ করছে।